আজকের দিন

আজকের দিন তার উত্তপ্ত ডান হাত বাড়িয়ে আমাকে ধরল যেন-
আমার ঘুম সে ভেঙে দিল,
আমার মশারি তুলে দিল,
একটা দুষ্ট চিতাবাঘের শিশু যেন তার রোমশ থাবার ঘায়ে
জানালা খুলে ফেলল আমার- পর্দা ছিঁড়ে উড়িয়ে দিল-
সমস্ত ঘরটা আলো বাতাস ও নীল আকাশের ভিতর
পাহাড়ের চূড়ায় একটা চিলের নীড়ের মতো (দুলছে যেন)
পৃথিবী আজ পাহাড়ের চূড়া শুধু-
উতকামন্দ পর্বতের একটা বিরাট সবুজ পাইনের শরীর
পাইনের সব-চেয়ে উঁচু সুস্বাদু শাখার অজস্র নীল পালক এই পৃথিবী আজ!

পৃথিবী আজ পাহাড়ের চূড়া শুধু- চূড়ার দীর্ঘতম পাইনের শরীর
আকাশের দাঁতের দম্ভে দৃপ্ত- রুপালি
আকাশের ভয়ঙ্কর সিংহ-দাঁত, সোনালি কেশর;
অজস্র উটপাখি জিরাফের নৃত্যে উড্ডীন রৌদ্র-রক্ত প্রান্তরের মতো এই বিশাল বাতাস
পৃথিবীকে আজ দিগন্তের থেকে দিগন্তের দিকে টেনে নিচ্ছে
নীল আকাশের থেকে আরও নীল আকাশের দিকে:
আমি কথা বলছি- হয়ে যাচ্ছে তা গান
আমি কাজ করছি- হয়ে যাচ্ছে কবিতা
আমার বইয়ের পাতা ছিঁড়ে যাচ্ছে- পাণ্ডুলিপি যাচ্ছে মেঘের দিকে উড়ে;
তুমি এসে দাঁড়িয়েছ- তুমি মানুষী
তোমাকে সোনালি সিংহের ছানা ব’লে মনে হয় আমার: সুন্দর হিংস্র ভয়ঙ্কর
দুঃসাধ্য বাতাসে আমার চোখের পাতা বুজে আসছে…
(নিঃশ্বাসে কী সাংঘাতিক সুন্দর বেদনা)
(নিঃশ্বাস গাঢ় হয়ে উঠছে)…

তোমার ব্লাউজের দুই গাল ফুলে উঠেছে
ব্লাউজ নয়: দুই তম্বুরা যেন
ধানের মদ খেয়ে শাড়ির ভিতর তোমার অজস্র ইঁদুর নাচছে;
অজস্র ধানের মতো তোমার চুলের ভিতর- তোমার দেহের পক্ক সোনালি মাদকতার ভিতর
মাতাল বিড়ালের দল মাতাল ইঁদুরের জাঙ্গাল শিকার ক’রে বেড়াচ্ছে আজ!
ধানের রস সমুদ্রের মতো থইথই করছে তবু
তোমার দেহের পক্ক সোনালি মাদকতার ভিতর।
অদ্ভূত দিন আজ-
রৌদ্র- আকাশ- বাতাস
সিংহের দাঁতের মতো, সিংহের কেশরের মতো
ফলসানির দেশের অনাদিতম শকুনের বৃহৎ নীল গল্পের মতো।