এক দিন যেই সব পটুয়ারা

এক দিন যেই সব পটুয়ারা কেরোসিন-আগুনের কাছে
বিরূপ পাথর এনে নিসর্গের অন্ধকার থেকে
অনেক সময় ধ’রে পা ছড়ায়ে বসেছিল চুপে
কোমরের ‘পরে হাত রেখে-
যখন স্বর্গীয় চাঁদ তার পর উঠেছে আকাশে
ম’রে গেছে কোঁচকায়ে প্যারাফিন-দীপ
তখন তাদের মনে হয়েছিল এই-এই ভাঁড়, নেতা, সম্রাট, সৈন্যকে
বিড়ালের- বানরের- শেয়ালের মতন প্রতীক।

লেলিহান তামাশায় তখন তাদের দেহে প্রাণ
তখন তাদের প্রাণে এসে যেত সিংহের মতো চমৎকার
রক্তের পিপাসা এক- তবুও শিল্পের মেধা স্থির
স্থিরতর হয়ে এক বিবেকের শ্লীল অন্তঃসার
প্রসব করিত ধীরে নিসর্গের চেয়েও নিটোল
স্বয়ং সম্রাট সেই শিল্পক্রম দেখে
হেসে খুন হয়ে এক কুকুরকে খোঁচা দিতে দিয়ে
লাথি খেত সারা-দিন নিজের বিবেকে-

সে-সব শিল্পীরা আজ নেই কেউ পৃথিবীর পথে
অনেক খুঁজেছি আমি পাথরের রূপসির স্তন
হয়তো সেখানে তারা নেমে আসে স্বাভাবিক মানবীয় লালসায় আজও
হাতে সব নারকী মশাল আর স্বর্গীয় ঝাড়ন
দেখে যাবে অগ্নির আলোয় নগ্ন শঙ্খের মতন নারীরূপ- এই পৃথিবীর মাংসের রূপ
চোখের খোঁড়ল থেকে ক্ষুধা তুলে আর-এক বার
জলের গেলাসে কীট দেখে চোখে যে-খেদ জন্মাবে
ঝাড়নে সে-সব মুছে ঝেড়ে যাবে স্বর্গীয় ন্যক্কার।

কে আজ তাদের তবু কোনও দিকে দেখেছিল?
আমি শুধু এক রাতে- অত্যন্ত গভীর রাতে এক
নগরীর তুলাদণ্ডব্যাপারির সমিতির থেকে নেমে এসে
নগরীর বারে ঢুকে, বুকপকেটের পুরু, মসৃণ, কালো মনিব্যাগ
দেখাতেছিলাম ধীরে গ্যাসের বাতিকে আর উজ্জ্বল কাঁচের
গেলাসে যে-আলোকের উপবৃত্তাকার বিম্ব পড়ে
তাহাদের। যেন আমি ম’রে গেলে ব্যাগের ভিতরে ডিভিডেন্ডে
করোনার চেয়ে থাকে একটি ঘণ্টা ঘড়ি ধ’রে।

সেখানে লোকেরা ঢের এসে গেল- চ’লে গেল-
তারা সব নগরীর জীবন্ত মানুষ
লম্বমান নগরীর উঠতি ও পড়ন্তের ভিড়
বেলুন ও জেপেলিন, হাতুড়ি, কাস্তে, লজেঞ্চুস
কাঁচিকাটা কাগজের মতো ঢের লিকলিকে জীব
অথবা জীবের হাড়গোড়
আঙুল ঘুরায়ে তারা অগ্নির অক্ষরে লিখে গেল: ‘মনিব্যাগ’
সে-আগুনে ভালো ক’রে ভাজা যায় মিয়োনো পাঁপড়।

সারা-রাত কাটালাম সমূহ নির্মল জল খেয়ে
দাঁতে কেটে পুনরায় খেলাম নির্জনতর জল
যেন এ-শরীর: কাঁচ,- কুহুলিন নির্ঝরের মতো
সাবান গরম জলে প্রক্ষালিত কুকুরের চেয়েও নির্মল
লঘু প্যারাসুট হয়ে যেন সে পায়ের নিচে বৈকুণ্ঠের দিকে
অথবা নারীর ঠোঁটে শিস হয়ে উপরের নরকের মেঘে
অনায়াসে যেতে পারে- কিংবা আরও লঘুতর প্রবীণ ধূমায়
খন পুরোনো মদ প্রথম ঢেলেছে কেউ পেগ’এ।

তখনই ভূতেরা আসে পৃথিবীতে নেমে
বিশেষত মৃত শিল্পীদের চাঁই- এক দিন যারা এই পৃথিবীতে থেকে
অধ্যক্ষ, রোমশ ব্যাপারি, নেতা, দালাল ও রাজনীতিজ্ঞের
বানরের মতো লোম চেঁচে দিত নাপিতকে ডেকে
কেননা জিনিস পেয়ে- এক দিন বিষয়ের ভিতরে প্রতীক
পেয়ে গিয়েছিল তারা- বিম্বের ভিতরে তাই পেয়ে গেল লয়
হয়তো-বা মনিব্যাগ, নারী, ধূমা আরও কিছু বেশি ভারি হলে
নেমে এসে খেয়ে যেত প্রতীকের ভিতরে বিষয়।

লেলিহান তামাশায় তখন তাদের দেহে প্রাণ
তখন তাদের প্রাণে এসে যেত সিংহের মতো চমৎকার
রক্তের পিপাসা এক- তবুও শিল্পের মেধা স্থির
স্থিরতর হয়ে এক বিবেকের শ্লীল অন্তঃসার
প্রসব করিত ধীরে নিসর্গের চেয়েও নিটোল
স্বয়ং কৌটিল্য সেই শিল্পক্রম দেখে
হেসে খুন হয়ে এক ক্যানারি’কে খোঁচা দিতে দিয়ে
লাথি খেত সারা-রাত নিজের বিবেকে।