এক দিন ভোরবেলা

মনে হল এক দিন ভোরবেলা লয়েড ট্রিস্টিনো লাইন কেঁপে
আমাকে জাহাজ এক নিয়ে গেছে নিবিড় বেগুনি
নির্জন সিন্ধুর পথে- হয়তো-বা সব সমুদ্রের
মানচিত্র থেকে দূরে- হয়তো-বা বিষুবরেখা আপনার ব্যাস
ক্লান্ত পৃথিবীর থেকে খুলে ফেলে এত দিন পরে
এ-সব জলের গন্ধ টের পায়- এই সব আকাশরেখায়
মিশে যেতে চায় এসে- চোখ বুজে হৃদয়ে তাকালে
কর্দমে বুদবুদিত ভীষণ সাপের মতো তাকে
দেখা যায় ঢের দূরে- কেবলই বিমুক্ত হতে চেয়ে
নিজের নিয়মে তবু ধরা প’ড়ে অন্তর্হিত হয়
পরিচিত পৃথিবীর শুঁড়ি, শনি, অধ্যাপক, শেয়াল ও দালালের মুখে
পৃথিবীর সিন্ধু তবে অই ক্লান্ত অপক্ষেপনের
ডান- বাম- অকৃত্রিম মধ্যপথ ছাড়া কিছু নয়
কিছু নয়। আমার জাহাজে ঢের যাত্রী আছে- তবু-
সকলে অপরিচিত প্রত্যেকের কাছে আজও
যদিও সময়চক্রে পৃথুর জন্মের পূর্ব থেকে
পরস্পরের মুখ দেখে গেছি সততই
প্রতিটি হৃদয়ে স্থির, গোপনীয় অভিসন্ধি আছে
প্রতিটি মুখাবয়ব পরস্পরের কাছে ভোরের আলোকে
সাদা কাগজের শুদ্ধ মুখোশের মতো ঘন
মনে হয় আমরা জীবিত লোক নই কেউ
অথবা জীবনপথে যে-সব খেলার প্রবর্তনা
নিপুণ, নিস্তব্ধ সব মানুষেরা ভূমি, সমুদ্রের
সূর্যের আলোয় এসে খেলে যায়- ভূতের গোচরে
সেই সব ধরা প’ড়ে যায় ব’লে নিয়তই সমুদ্রের পাখি
শিহরিত হয়ে ওঠে- পাখির কঙ্কাল ধার ক’রে
ভূতেরা কড়ির মতো বেজে ওঠে বায়ুর ভিতরে
বায়ুর সঙ্গীত আছে- সর্বদাই চারি-দিকে আলো
তবুও বিপদ এক ইঞ্চি-ইঞ্চি আলোড়নে- ধীরে
অগ্রসর হয়ে আসে- সকলের হৃদয়ের দিকে
পরস্পরের রক্তে পরিপূর্ণ প্রবীণ পেয়ালা
পরস্পরের বুকে ক্রমেই শুকায়ে আসে যেন
বাতাস যেমন ক’রে পাইনের বন থেকে ব’য়ে
ধবল চাদরে ঢাকা প্রণয়ীর দেহকে তবুও
নীরবে শুকাতে থাকে অমলিন যক্ষ্মা’র ক্যাম্পে
আমরা বিপদ যেন প্রতিটি মানব
অন্য মানবের কাছে (সে-রকম);
আমাদের (সকলের) নিজেদের ভাষা
রয়ে গেছে- তবুও তা ব্যাপারে লাগাতে গেলে ঠোঁট
লঘু হয়ে ফেঁসে যায়- অথবা কণ্ঠের থেকে বিভিন্ন রোলের
পিসু, মশা, কুকুরের, গোধিকার, এঁটিলি’র খেদ
উদ্বোধিত হতে চায়- আমরা নীরব হয়ে থাকি।