আকাশে পাখার শব্দ

শুনছ? আকাশে পাখার শব্দ?
চৈত্রের বিস্তৃত বাতাসের ভিতর
পরিচ্ছন্ন রাত্রির অনাদি অকুতোভয়তার সীমানা ডিঙিয়ে চলেছে তারা;
যেমন এক দিন হানিবল আল্পস ডিঙিয়ে চলেছিল?
কিংবা নেপোলিয়ন রুশিয়ার তুষারকে বিধ্বস্ত করতে?
জেঙ্গিসের মতো এরা? হাবসি পহ্লবি হূণ যবনের নীল রক্তিম স্ফীতির মতো?
আজ এই চৈত্রের বিশাল অন্ধকারের শীর্ষে- নক্ষত্রের সন্ধির থেকে সন্ধি পেরিয়ে
এই যাযাবর পাখির দল?

তারা চলেছে
বাতাসের ভিতর পিস্টনের শব্দ তুলে
নিদ্রিতের মাথার ভিতর বিচিত্র স্বপ্নের ফোয়ারা জাগিয়ে
সবুজ ঘাসের প্রান্তরকে আকাশের সাথে মিলিয়ে দিয়ে
মৃত্যুকে মানবককে সীমানাহীন নীল জানালায় উত্তোলিত ক’রে
এই বিস্তৃত বাতাসের চৈত্রের রাতে-
(কী যে বিস্ময় রচনা করছে তারা!)

(তারা চলেছে)
ভারতসমুদ্রের দিকে- আরবসাগরের উদ্দেশে
মানবকের ইতিহাস গড়বার জন্য নয়
বিস্ময়ের রাত, বাতাস, নক্ষত্র ও প্রান্তরের আশ্চর্য ইঙ্গিত এরা যত জানে আমরা তা জানি না

পৃথিবীর ধানখেত আমাদের খাদ্যের বস্তু শুধু- স্বপ্নের জিনিস নয়
পৃথিবীর ঘাস হতে পারে আমাদের আরামের জিনিস- আবেগের কিছু নয়
মাঠের ভিতরে উঁচু-উঁচু গাছ- কোনও অনুভবের জিনিস নয়
এই যে পাখির দল উড়ে চলেছে আমাদের কাছে এরা খানিকটা রক্তমাংসের সমষ্টি মাত্র
তবুও তারা
জীবনের নীল সমুদ্রকে ছিঁড়ে আরও গাঢ় উন্মথিত নীল আবেগের মতো
ফসলশূন্য নির্মল আকাশের অবাধ অপরূপ সমতলতার ভিতর দিয়ে
(উড়ে চলেছে)

প্রান্তরের পথে পৃথিবীর নাড়ির সঙ্গে ঘাসের মতো সংযুক্ত হয়ে আছে শরীর
আমার শরীর যদিও
তবুও স্মৃতির আকাশে এদের সঙ্গে আমি কত যুগ উড়ে ফিরেছি

উড়ে চলেছে
উলার হ্রদের দিকে
ঝিলমের তীরে
কাশ্মীরের খেতে;
হয়তো ভূমধ্যসাগরের পানে
আব্রুৎসির সবুজ প্রান্তরে

কিংবা বাংলার নির্জন ধানসিড়ি নদীর পারে
সবুজ অরণ্যের জানালায়
নীড়ের জন্য
প্রেমের জন্য;
মৃত্তিকা যখন হিল্লোলকে গ্রাস করবার জন্য উন্মুখ
তখন আবার নিম্নভূমি ছেড়ে
ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখির সঙ্গে- পিস্টনের শব্দে-
আকাশের অন্তরালে বিচ্ছুরিত আকাশের রহস্যসৌধের খোঁজে হারিয়ে যাবার জন্য।