এখানে ভোরের রৌদ্রে

এখানে ভোরের রৌদ্রে মনে হয় উঁচু-উঁচু ঝাউবীথি যেন আরও অজস্র বৎসর
করিবে সময়রস পান এক এশিরিয় সম্রাটের সুবিশাল প্রাসাদের
কক্ষে ব’সে; বিস্তৃত ধূসর এক টেবিলের চারি-পাশে যেন
কয়েকটা প্রাংশু যোদ্ধা মৌন হয়ে ব’সে আছে- বিবর্ণ চিলের গল্প যেন
তাহাদের বর্ম থেকে ঝরিতেছে- পৃথিবীর নদী যেন তারা দেখে নি ক’ বহু দিন
অ্যামেজন- মিসিসিপি- জাম্বেসি- গঙ্গা- টাইবার
শোনে নি এ-সব নাম কোনও দিন;- যেন কোনও বন্দরের রজকেরা এসে
কাচিবে না তাহাদের বস্ত্র আর কোনও দিন;- যেন কোনও ক্ষৌরকার
তাহাদের চুলের অরণ্য যেন নিদাঘরাতের স্বপ্নে দেখে ফেলে
সেই সব পাখিদের কথা ভাবে ঢের দূর অস্পষ্ট যুগের
লম্বমান রক্ত নখে ঝুলায়ে যাহারা
চিত্রিত জিরাফ-যূথ টেনে নিয়ে চ’লে যায়
নীলিমার মনোরম দানবীয়তায়:
যেন সব ডোরাকাটা পালোয়ারি পর্তুগীজ জাহাজের পিছে
উত্তরিছে গাধাবোট: ভোরের স্ফটিক রৌদ্রে
সিংহলের ক্লান্তিহীন সমুদ্রের সময় ধূমায়
মেঘের জাজিম ছিঁড়ে- অনেক মন্থর তুলো
আকাশের সমতলে ছেড়ে দিয়ে
হাতির কানের মতো বিশাল পালক নেড়ে- বাতাসের জন্ম দিয়ে
সেই সব শেষ পাখি- আশ্চর্য স্বর্গীয় পাখি উড়ে যায়
আকাশের মতো বড় প্রান্তরের পরথুপী ঘাসে শুয়ে অবিরল
ক্ষুর ফেলে- কাঁচি ছুঁড়ে- নরুনের কথা ভুলে গিয়ে
নিদাঘের রজনীরে দুঃসাধ্য ডিমের মতো উটপাখিনির
নিদাঘের দু’-পহরে আতপ্ত খড়ের কোলে গড়ায়ে-গড়ায়ে
ক্ষৌরকার স্বপ্ন দেখে- তন্দ্রা ভাঙে- স্বপ্ন দেখে ফের
গাধার দুধের মতো অনর্গল উষ্ণ বাতাসের ফেনা পান ক’রে
এইখানে বৈশাখের ঝাউ-তরুদের নিচে শুয়ে।