এখন আকাশে রাত

এখন আকাশে রাত,
সে অনেক রাত;
ঊনিশশো অনন্তের রাত্রি না-কি।
সময় ও অসময়- সকলের সুর
স্থির স্থিরতর হয়ে উঠে
জলের ওপরে জলকণিকার কথিকার শব্দের মতন
অবনমনের ব্যাপ্তি পায়।
পৃথিবীর জাগরীর গুঞ্জরণ দূরে
সৈন্য নটী ভিখিরির;
তার পর কোনও এক সময়ের জন্য নীরবতা
মেনে নিতে হবে জেনে সার্থবাহদের
আলাপ মিইয়ে আসে মুখে
এখন ঘুমের আগে
গভীর রাত্রির পথে।
পৃথিবীর নানা দেশ নগরীর কয়েকটি সচকিত ছবি
প্রাণে উৎসারিত হয়ে যেতে চায়:
দিল্লী, চীন, প্যালেস্টাইন, কলকাতা, করাচী,
এথেন্স, মিশর, ফ্রান্স, মস্কো, লণ্ডন, ন্যুইয়র্ক, ওয়াশিংটন
আধুনিক ভূমিকার গাঢ় মানদণ্ডের মতন
এই সব।

এই সব নগর বন্দর দেশ আজও
অতীতের উত্তরাধিকার থেকে ক্লান্ত প্রাণে উঠে
নতুন সূর্যকে সেধে তবু তাকে শীত ক’রে দিতে চায় যেন।
কোথাও ভার্সেই প্ল্যান লোকার্নো জেনিভা প্রেত… প্রাণে
কথা কয় ব’লে মনে হয়;
নিথর অটোয়া-চুক্তি ফেঁড়ে গিয়ে- থেমে
কেউ নয় আজ আর;
মিউনিখ প্যাক্ট চিরন্তন বিষয়ের
লক্ষ্যভেদ হয়ে গেছে ভেবেছিল;
প্রায়ান্ধ দেবীর মতো নীলজলরাশির ওপার থেকে দ্বীপ
সমস্যার নিরসন হবে বলেছিল
ভারতকে যাকে যা দেবার সব স্থির ক’রে ভালো ক’রে দান ক’রে;
আরও পরে কনফারেন্স কমিশন প্ল্যান
বিদেশ স্বদেশ সমসাময়িকতার হয়ে তবু
যেন ঢের বিস্তীর্ণ সময়
অধিকারে রয়ে গেছে মনে ভেবে বিহ্বলতায়
মানুষকে বিজড়িত ক’রে চ’লে গেছে।

কবেকার অন্ধকার আদি দায়ভাগ থেকে ক্রমে মানবের
জীবন বন্ধনমুক্ত হতেছিল না-কি?
কারা যেন সেই
সমুদ্রের মতন মুক্তিকে
গোস্পদে বিমুক্তি দিতে গিয়ে নেশনের
ব্যবহারে ব্যভিচারে বারবার ছেনেছে ছিঁড়েছে।
রাষ্ট্রনীতি কামনা-কেলির চুক্তি সব;
এ ছাড়া এ-সব দেশ জাতি অধিনায়কের প্রাণে
কোথাও প্রেরণা নেই- দীপ্তি নেই;
আজ এই আধুনিক দিনে মাসে সময়ে কী কাজ হতে পারে
সে জ্ঞান হারায়ে ওরা অন্তহীন হেতুহীন সময়ের হাতে
সব ভুল শুদ্ধ হবে ভেবে
অবচেতনায় অন্ধকারে প্ল্যান গড়ে, প্যাক্ট করে।
সময়ের ব্যাপ্ত চোরাবালির ভিতরে
ডুবে যায়।
তবুও এখন ওরা
নতুন শক্তির মতো
নিজেদের মতো সেই মূল্যজ্ঞান রয়েছে; তা ছাড়া
কোথাও অপর কাজে মূল্য নেই মনে ভাবে ওরা
আবার প্রলুদ্ধ ক’রে যায়,
অবসন্ন পৃথিবীর প্রাণে আত্মপ্রসাদের ঋতু
আবার নেমেছে ব’লে।

ব’লে নিতে চায়: সবই নেশনের নেশনের নেশনের।
কানাডার সমুদ্র ও বল্কান বল্টিক গ্রীক সাগরের থেকে
দিল্লী লণ্ডন কায়রো ডাম্বার্টন ওক্স তেহেরান ইয়াল্টায়
ফ্রান্স লেকসাক্সেস চীন আমেরিকা সোভিয়েতে
বিরাট বিসার নাদ মনে হয় যেন ব্যস্ত, অন্তরীক্ষে ঘুরে
সন্তানের মতো নিঃসীম জীবনের জননীকে খুঁজে
শিহরিত হয়ে তবু দেখে গেছে আজ এই অন্ধকার পৃথিবীর সীমা
যদিই-বা আলোকিত হয় তবে সে এক বিমূঢ় হিরোশিমা।
চারি-দিকে তাই ব্যর্থ মৃত্যুশীল তবুও আশ্চর্য সব
আশাশীল মানুষের আলোড়ন।

তারা স্থির নেই;
দিন শেষ হয়ে গেলে আরও বড়ো রাত্রির ভিতরে
ঘুমে নেই; মৃত্যু আছে; অথবা আমৃত্যুলোক- পামর, অনন্দা;
সে-সব মরণোত্তর ভিড় আজ অন্ধভাবে অনুভব করে;
তাদের দেহের সব অনাগত সন্তানের তরে রেশনের

নির্দিষ্ট মাত্রার মতো কোনও দিকে নারী
নারীরা রয়েছে- কিংবা নেই;
প্রেম নেই, প্রীতি নেই, সূর্য নেই, অন্ন নেই, কিংবা মহাকাল
কেউ নয়;
অন্ন নেই- অন্ন নেই- নেই;
ইতিহাস: বিছানায় মৃতপ্রায় মুগ্ধা অন্তঃসত্ত্বার মতন;
বাকি সব সন্তানের সন্তানেরা এসে এক দিন
লিখে যাবে।

মানুষের চেতনার দাহ আছে আজও শোকাবহ
যত বেশি আলো তাতে আরও বেশি তাপ
সংগতি বেড়ে গেলে পেতে পারে ক্রমেই স্নিগ্ধতা
প্রাণের প্রেমের স্বচ্ছ আবরণ দিয়ে তাকে ঢেকে দিতে হবে
দিতে হবে ক্রমেই স্নিগ্ধতা
এ না হ’লে বিজ্ঞানের মর্মে মর্মে কীট আর ব্যথা
নিরন্তর দোষে পরিণত হবে মানবের প্রতিভার গুণ
সব আলো হয়ে যাবে ক্ষমাহীন নিয়মের আগুন।