এখন অঘ্রান-ভোর

এখন অঘ্রান-ভোর;- ক্রমে সূর্য উত্তেজিত হয়ে জ্ব’লে ওঠে
যত দূর মনশ্চক্ষু চ’লে যায়- ঐ দূর- আরও দূর- কুয়াশা- প্রান্তরে
কারা আছে?- স্ফটিক নিয়েছি তুলে মায়াবীর হাত থেকে আমি
চেয়ে দেখি- শুনেছি ত্রিকাল এখানে না-কি জোটে
কারা যেন অন্ধ রৌদ্রে- পৃথিবীর ভূমিকার পরে
ছুটিতেছে;- জাদুকর, তোমার পাথর ঢের দামি
তারা কেন উচ্চারণ ক’রে যায়
গভীর আগ্রহে জেগে উঠে
অবিকল সংক্রামিকতায়
কোথায় যেতেছে তারা ছুটে
নগরীর থেকে তারা স্খ’লে যায় প্রান্তরের দিকে
মনে হয় সকলেরই যুবক বয়স
স্থবিরের মতো তবু বিরচিত মুখ
শিশুর মতন হাতযশ
প্রান্তরে পাখির মতো নয় তারা, তরঙ্গের তিমিঙ্গিল নয়
মুহূর্তেই ছুটে যায় তাই ফের নগরীর পানে
মনে হয় দু’-চারটে লেবু তীক্ষ্ণ ছুরি দিয়ে কেটে
তাদের মুখের গর্তে ছুঁড়ে ফেলে দিলে ভালো হয়
তারা চায়। দুগ্ধজ শিশুর মতো মূঢ় অভিমানে
তার পর লুপ্ত হতে চায় কিছু বালিকার মতন বনেটে
তারে তারা মৃত্যু বলে।
দীর্ঘ এক জ্ঞানময় জীবনের শেষে
অজ্ঞানের অন্ধকারে সমর্পিত হলে
তখনও অস্থি কাঁদে ক্লেশে
কিংবা কেউ সারা-দিন
ভাঁড়ের পোশাক টুপি প’রে
গোধূলিকে মনে করে এসেছে নির্জন নিঘৃণ
উল্টো-গাধার পিঠে চ’ড়ে
এরা সব ভিন্ন জাত। জীবনকে অকাতরে চেয়েছিল দিতে
কোঁচড়ের থেকে শেষ ফুল, শেষ স্পর্শপাথর, কানাকড়ি।
দূরবিনে সৌরগ্লানি দেখে গেছে- জীবনের আশ্চর্য প্রতীক
জেনে গেছে সূর্যকে তবু পাটের পলিতে
অন্ধকার ঘটির ভিতরে থেকে এই সব অমোঘ শফরি
বেজেছে ঘণ্টার শব্দে। সূর্যমন্দিরের ঘড়ি- সকালবেলার বৈতালিক।

জীবন অখাদ্য তবু আজ রৌদ্রে
আমাদের কাছে
থার্মিডরের মতো মৃত্যু যেন মাঝশূন্যে।
মাকড়ের মতো ঝুলে আছে।

‘এই বার আমি তবে’- ‘আমি’
ধাবমান যুবকেরা বলে
‘আমাদের আমলকী ক’রে দাও
মৃত্যুর ধীমান তলে।’