আলোর কলকাতা

সুদূরতম গলির ভিতরেও গ্যাসের আলো
কলকাতায় অন্ধকার কখনও নামে না
এই শ্রাবণ-রাতের গহন আকাঙ্ক্ষার ভিতরেও
সভ্যতা নিজেকে দাঁড় করিয়েছে রহস্যহীনতার ভূপৃষ্ঠে
ভালো ক’রে টের পায় না সবাই কত বড় আশ্বাসের ভিতর রয়েছে তারা
বাইরে কত নক্ষত্রের আলো আজ ক্ষীণ- কত নক্ষত্র ম’রে গিয়েছে
কিন্তু সুদূরতম আকাশের দিকে তাকাও কেন, হৃদয়,
(বসিরহাটে কী হচ্ছে তা-ও ভাববার দরকার নেই)
বর্মা অয়েল কম্প্যানির একটা মস্ত বড় ডিমের জ্যোতির দিকে তাকিয়ে দেখ
গ্যাসোলিন এখানে শ্বেত উপনিষদের চেয়ে ঢের বড় জিনিস
ফুটপাথের কিনারে এক-একটা ঝাঁকড়া গাছের ভিতর কাকের আস্বাদ পাওয়া যায়
চার-দিককার নিনাদিত আলোয় খানিকটা দুঃখিত? (হয়তো)
কিন্তু পাখি নিয়ে সভ্যতা নয়
পোলট্রির দোকান নিয়ে নিশ্চয়
এই শ্রাবণ-রাতেও রাস্তার ঐ কুকুর-দম্পতি খানিকটা অন্ধকার পেল না
যাক- গেছে- এত আলোর ভিতরেও কামের মাথায় বাসের ঘূর্ণিতে থেঁতলে চ’লে গেছে
কুকুরের নরকের অন্ধকারে; অন্ধকার চেয়েছিল।

গ্যাসোলিন এখানে কৃষ্ণ-যজুর্বেদের চেয়ে ঢের বড় জিনিস
গ্যাসোলিন- গ্যাসোলিন- গ্যাসোলিন!- হোটেল যেমন তার বয়কে ডাকে
কিংবা পুরুষ তার নারীকে- কিংবা মায়াবী তার জিনকে
সেই জিনকে ডেকেছি আমরা- আমরা তৈরি করেছি আলোর কলকাতা
গ্রে স্ট্রিট পেরিয়ে চিৎপুর- তার পর কোনও এক গলির ভিতরে আলো ঢের কম
কিন্তু এক মাঘের শেষ-রাতে হঠাৎ নৌকার ভিতর জেগে উঠে
নয়ানি নদীর অন্ধকার তীরে প্রান্তরের ও-পারে যে-একটি নক্ষত্রের নির্জন অধোমুখ
ও নিশ্চিন্তা দেখেছিলাম, হৃদয়,
কলকাতার কোনও চিমনির ভিতর সভ্যতা তাকে আনতে পারে না কি?
কিন্তু সে-নক্ষত্র কোটি-কোটি বছর হল ম’রে গেছে।

এক-একটা বাস ডাইনোসুরের মতো ছুটে যায়
মনে হয় যেন সেই আদিম সরীসৃপেরা
বিধাতার (মনের) অন্ধকারের স্বাদ চায় নি কোনও দিন
যা চেয়েছিল অমানুষিক পুচ্ছের উল্লাসে পেয়েছে আজ।

ম্যাস্টোডোনরা যখন এই পৃথিবীতে ছিল
চারি-দিকে ছিল সমুদ্র- অরণ্য- এবং অন্ধকার নক্ষত্র
অন্ধকার তখন বিধাতাকে জর্জরিত করেছিল
তাই তিনি ক্রমে-ক্রমে মানুষ সৃষ্টি করলেন
সমস্ত নক্ষত্রের আলো নিভিয়ে
রাতের-হংকং রাতের-টোকিও ও রাতের-কলকাতার দিকে তাকিয়ে থাকেন আজ
এরা যখন জ্ব’লে ওঠে- তাঁর আকাশ ও নক্ষত্রের কোনও প্রয়োজন থাকে না আর।