আমাদেরও প্রাণে

আমাদেরও প্রাণে কোনও দিকদর্শনের যন্ত্র রয়ে গেছে- তবে।

মানুষের আচরণে চারি-দিকে হৃদয়যন্ত্রের চূর্ণ স্প্রিঙ
প্রতিভাত হতেছে যখন- আমি যদি এখন আশ্বাস পেয়ে বলি
আশ্চর্য ইশারা এক রয়ে গেছে কীলকলিপির থেকে ক্রমে
মুক্ত হয়ে জন্তুদের কাছে সব- নিসর্গের থেকে চুপে বিমোচিত হয়ে
মানুষের হৃদয়ের তরে- তা হলে আমার গল্প ভাঁড়ের কাহিনি
কোনও এক মূল দালালের কানে- রক্তের নদীর ‘পরে ব’সে।
জানি আমি;- এমন ভেবেছি আমি বহু দিন
অপরকে কিছু জানাবার আগে- যে-মানুষ অবিকল হেঁয়ালির ঘরে
নিজে প্রতারিত হয়ে ফেরে- তাহার হৃদয়ে ভয় ন্যূব্জ প্রান্তরের
ঘাসের উপরে ক্লান্ত হাত রেখে- নদীর পেটের ‘পরে জলের বেলুন
স্পর্শ ক’রে- যেন এই পৃথিবীতে আণবিক উত্তেজনা শুধু।
নিজেরে ঘুরায়ে ফেলে রাত্রি-দিন আমাদেরও বিঘূর্ণিত হতে বলে
আনাড়ির হাত থেকে ক্ষিপ্ত এক লাটিমের মতন উদ্বেগ
আমাদের আয়ুর সময় ভ’রে- আমরা সকলে-

এই কথা মনে ক’রে আমিও পেয়েছি ভয় ঢের দিন
যখন সুদীর্ঘ সব জানালারা খুলে গেছে গ্যাজেবো’র থেকে
বিকেলে আলোর মুখে- প্রান্তরের পরে আমি ভিক্ষুকের মতো
ভেবেছি অনেক কথা- প্রায়শই ইকনমিকাল;
সত্য সব; বিপ্লবের আয়োজনে ঘুরেছি সৈনিক হয়ে
আজও আমি জীবনের অবিকল ব্যাপদেশে ঘুরে
শ্রেয়তর সত্য ব’লে মনে করি মৃত লেনিনের আকাঙ্ক্ষাকে
অথবা অধিকতর শ্রেষ্ঠ যাহা মান পেয়ে প্রকাশিত হবে এক দিন
কোনও এক প্রেমসমীচীন দেশ থেকে- পৃথিবীতে
আমাদের সকলের তরে। মানুষের প্রতিভা সে-দিন এই পৃথিবীকে
ধবল, উন্নততর মিনারের নিরাময় অকৃত্রিমতায়
ভ’রে দিয়ে যাবে- যাতে- বিমূঢ় বালকও তার বিছানার থেকে জেগে ভোরে
(মানুষের সুশৃঙ্খল আবাসের পাথরের মাংস খেয়ে- তবু-)
(অথবা তেমন শুভ্র উত্তরাধিকার থেকে সঞ্চারিত হয়ে)
সার্থকতা পেয়ে যাবে মেঘ, লোষ্ট্র, আকাশের কাকচক্ষু আলোর বিষয়ে
অথবা যুবক- প্রৌঢ়- অথবা স্থবির- সব মানুষের
লুপ্ত ইতিহাস থেকে আগাগোড়া অন্তঃসার তুলে নিয়ে প্রাণে
গ্যাজেবো’রও বড়ো জানালার থেকে চেয়ে অথবা প্রান্তরে ঘুরে একা
পায়ের ধুলোর নিচে নষ্ট অলকার মতো মৃত এক দেয়ালিপোকার
দুর্বোধ্য অন্বয় খুঁজে হেঁট হয়ে ব’সে র’বে সকালবেলার শ্লীল
অফুরন্ত রৌদ্রের তিমিরে ডুবে থেকে- সর্বদাই সুধী দূর দানবের
আসিবার সম্ভাবনাময় ঘণ্টা বিকেলের মেঘে
টের পাবে। সহসা যন্ত্রের রোল- সমস্ত গ্রন্থের অবলেপ
সব বিষয়ের থেকে সব জলৌকা’র শুঁড়
তাহার মুখের দিকে টেনে এনে।

এইখানে ধূসর তুষের মতো মাঠের ভিতর নিরন্তর
একটি বৃক্ষের শিঙে অবহিত দাঁড়কাকদের
খড়- নীড়- কম্প্র ডিম অবিরল- অথবা অনেক দিন
ডিম্ববিহীনতা, বায়ু, শাবকের রিরংসার কোলাহল, আলো।
তার পর তাহাদের সকলের শুদ্ধ অন্তর্ধান।
এ-সব বিষয় নিয়ে মানুষের আলোকের বেলা
যেন এক ছল আরও অধিক নিটোল হয়ে থাকে
নিচে ন্যূব্জ পৃথিবীর ষোল-আনা ব্যাপারির তোরঙ্গের থেকে
যে-সব জিনিস কিনি;- আর এই এ-সব জিনিস
উভয়েরই বিনিময়, মান ঠিক রয়ে গেছে তবু-
উর্বর কুক্ষি সিক্ত ক’রে দিতে পরস্পরের প্রয়োজন।

এই ভূমিকায় উঠে আমার হৃদয় এই পৃথিবীকে টের পায়
যেন ধীরে চোখ বুজে গূঢ়- করতালি দিলে তারা জাগে
যাদের জাগাতে গিয়ে মানুষ ক্রমেই ডায়ালেকটিকাল আজ
মানুষ দন্তীর মতো বহু দিন থেকে
এই সব অনুভব- অভিজ্ঞান- আমাদের;
মনে হয় সব মানুষের
বিমুক্ত আত্মার মতো নদীদের জল- কণা-
গেলাসের জলের গ্লব্যুল
হয়তো-বা কোনও দিন ইলেক্ট্রোরেডিওগ্রাফ’এ-
কিংবা আরও স্থিরতরতায়
এই সব অনুভাব সত্য ব’লে প্রতিভাত হয়ে যাবে- হয়তো-বা
মিথ্যা সব- অন্ধকার অন্তরীণ প্রতারণাময়
তবু কোনও দিন কোনও গম্বুজের জ্যোৎস্নায় পেঁচা
অথবা মনীষী তার পায়ের ধুলোর নিচে চেয়ে
একটি শনের মানে পাবে না ক’ খুঁজে কোনও যন্ত্রের ভিতরে
যদিও তখন সব দিকহস্তীদের শেষ আহরিত হাড়
হয়ে গেছে আপামর মানুষের সাধারণ কথার বিষয়।