আমাকে দেখেছে ঢের

আমাকে দেখেছে ঢের অন্তেবাসী মানুষেরা দীর্ঘ দিন ভ’রে
বিশেষত হেমন্তের দিন এলে- বিবর্ণ পাতার পথে এরা
অথবা নদীর পারে কোনও এক সঙ্গীহীন হিম চাঁদমারি
পাহাড়ের পিঠে উঠে বটের ও তিতিরের ভিড়ে
একাকী রয়েছি ব’সে পৃথিবীর মূল তিতিরের
প্রিয়ের মতন একা- গভীর তামাশা এসে মাঝে-মাঝে ক্বচিৎ তবুও
আমাকে ধ্যানের এই অপরূপ শান্ত ছিদ্র থেকে
ধীরে-ধীরে নীরবে খসায়ে তুলে নিয়ে গেছে- প্যাঁচকস খুলে
খড়ের ঘরের দিকে- (লোচন ও চন্দ্রনাথ রাজবংশীদের
পনেরো বছর আগে ম’রে গেছে তারা)
আধো-স্বচ্ছ প্রতীতির ভিতরে যেখানে
স্থবির মানুষ দু’টো এক দিন যেন কোনও মৃত ধনিকের
ভিটের উপর দিয়ে ঘুঘু আর সর্ষের খেত
নীরবে চরায়ে হেসে চ’লে গেছে তবু
কেউ কোনও দিকে কিছু চরায়েছে কি-না
জানে নাই- সেই বুড়ো লোচনের ঘরের নিকটে
নেউল-ধূসর এক স্থির নদী ধীরে
বয়ে যেত- বাবুই, হোগলা-খেত, খাগড়ার নল
গগনভেড়ের দেশ থেকে শৌর্যে নেমে এসে- তবু
লোচনের দোর দিয়ে অমায়িক এঞ্জিনের মতো
সহসা মন্থর হয়ে মিশে যেত একা
সর্বদাই গোলাপায়রার মতো ঘুরে- তরঙ্গের কথা
কাদার নিকটে ব’লে- সর্বদাই বিড়ালের নর
বিড়ালের মতো সব মানুষের- তিতিক্ষার কোলে
বহে নিয়ে- মিশে যেত শকুনের মতো ম্লেচ্ছ রঙে
পাটের প্রান্তরে গিয়ে- দূরতর ক্ষিতিজ রেখায়
এই সব দূরতার পরে শূন্য সকালবেলার
শূন্যতর বিকেলের সূর্যের আলোক সর্বদাই
আমার নিকটে তবু অমরার গাবিন গোরুর
ধবল দেহের মতো মনে হত সেই দিন
(হয়তো-বা কাঁচি-ছাটা গোরু এক ছবির বইয়ের
কিংবা নিট প্রতিশ্রুতি- সঙ্কল্পের পথে
কেউ যদি অগ্রসর ক’রে দিত সন্তানগুলোকে
আমূল ভুলের পথ থেকে তুলে- মূল প্যারাডিম
কেটে ফেলে- বসাত নতুন প্যারাডিম
এই সব কাজ তবু মানুষের ব্যগ্র হৃদয়ের
রক্তিম ক্ষুধার চেয়ে অধিক মন্থর সর্বদাই।
পীড়িতেরা ম’রে যায়- একটি শতাব্দী তবে শেষ
হয়ে যায়- আমি সেই লোকায়ত মৃত পৃথিবীর
নাভির ভিতর থেকে কথা বলি- হয়তো কোথাও
কিছু-কিছু আলো তবু রয়েছিল- রয়ে গেছে ব’লে)
যেন কোনও নিচু নরকের ম্লান কর্নিসের থেকে
একাকী তাকায়ে আমি লোচনের কালো সাদা চুল
ইন্দ্রনাথের দাড়ি অত্যধিক স্নিগ্ধ তামাকের
বারংবার ব্যবহারে ডাইনির চুলের মতন
অথবা বিকেলে রোদে শূন্যজীবী লতার মতন
হেমন্ত-সন্ধ্যার দিকে শীঘ্রই অগ্রসর হয়ে
পৃথিবীর প্রবীণ পেঁচাকে তার ছিদ্রের ভিতরে
ডেকে আনে (ভাদ্রের ধানের খেত, মরিচ, মুলোর প্রাঙ্গণে
খড়ো চাল ঘিরে নীল, মসৃণ লাউ)
হুঁকোর নীলাভ ধোঁয়া- কয়েকটি মানুষের সেমিকমেটোজ
জীবনের মাছিগুলো- অঘ্রানের রোদে
নীরবে উড়ায়ে দিয়ে দেখেছি তবুও রোদ
প্রতিভার কথা বলে- অকৃত্রিম আড়ষ্ট পাখির
সলতের মতো সরু আকাঙ্ক্ষার অভিক্ষেপ
পিঙ্গল মাংস হাড় প্রক্ষালন ক’রে
নির্মলতা দিতে চায়- দিয়ে গেছে- যদিও সে রাজবংশীগুলো
পৃথিবীর বুক থেকে একে-একে ঝ’রে গিয়ে বাজারের বারে
মৃত নয়- আজও তারা মৃত নয়- বিড়ালের মন
আট বার ম’রে গিয়ে- তবুও নবম জন্ম নিয়ে
বেঁচে আছে ধেনো-মদ- গণিকা- ও জলপুলিশের
ক্রমোন্নতির পথে- হয়তো উন্নত তারা আজ।