আমার এ-অনুভব

আমার এ-অনুভব ভুল নয়- পৃথিবীর শাখা পাতা ঘাসে-
শান্তি আজও র’য়ে গেছে সমস্ত রক্তের তরে, বেদনার তরে
রামধনু, রাঙা, নীল, জাফরান মেঘ আজও ফুটিছে আকাশে
নক্ষত্রেরা আসে আজও সহানুভূতির মতো বুকের ভিতরে

অন্ধকার আকাশের; আমাদের অবসন্ন প্রাণে
পাহাড়ের দেবদারু প্রান্তরের আমলকী নিম আম বট
আকাশের নীলাভ রঙের ছোঁয়া- নক্ষত্রেরা শান্তি আজও আনে
ইহাদের নীরব করুণা সব র’য়ে গেছে মানুষের প্রাণের নিকট

আমার এ-অনুভব ভুল নয়; কাহারা ফেলেছে ক্যাম্প- জ্বেলেছে আগুন
প্রান্তরের সীমানায়- তারও পিছে দীর্ঘ নীল গাছের শরীর
অনেক নিবিড় গন্ধ- ঝাউ, জাম, অশ্বত্থ, সেগুন
শান্ত নক্ষত্রের নিচে হয়ে আছে স্থির

হৃদয় তাদের সাথে স্থির হয়, শান্ত হয়, কী এক ইশারা
খুঁজে পায় বনানির নিভৃত ধূসর বুক থেকে
শাখার পিছনে অই নীলাভ চাঁদের মুখ দিয়ে যায় সাড়া
সমস্ত প্রান্তরখানা জেগে আছে ঘাসের চুম্বনে মুখ ঢেকে

ঘাসের চুম্বনে, আহা, শান্ত ভিজে পৃথিবীর ঘাসে
জলের কিনার থেকে ডাহুকী ডাকিয়া ওঠে কলমি’র নীড়ে
হরিতকী শাখাগুলো ডানা মেলে রাতের বাতাসে
কলরব ক’রে ওঠে নক্ষত্রের ভিড়ে

হে হৃদয়, ইহাদের মনে রেখো, ইহাদের মনে রেখো তুমি
এ-জীবনে অনেক অঙ্গার পথে অনেক আরক্ত পথে ব্যথা পাবে আমার হৃদয়
অনেক হাড়ের পাশা, মিথ্যা চেষ্টা, বৃথা ইচ্ছা- সংগ্রামের রক্ত মালভূমি
তোমারে ঘিরিবে এসে,- তবু এই বনানির সান্ত্বনার জয়

র’য়ে যাবে;- এই গোধূলির মেঘ রৌদ্ররাঙা প্রান্তরের মুখ
ধানের খেতের শব্দ- আসন্ন নদীর গন্ধ- নক্ষত্রের রুপালি আগুনভরা রাত
সুদীর্ঘ সোনালি দিন ফাল্গুনের- বারবার জীবনে আসুক
নিস্তব্ধ ঘাসের ‘পরে বুক রেখে- নদীর জলের চোখে রাখিব দু’ হাত

তার পর সব ব্যথা ভুলে যাব,- যে-বেদনা ভুলিবার নয়
পৃথিবীর কলরবে অধীর কামনা যারে জন্ম দেয়, মৃত্যু নাই যার
এইখানে রাঙা মেঘে নীল জলে অনেক নিবিড় ঘাসে সে-ও যেন ঘাস হয়ে রয়
হয়ে যায় রাঙা মেঘ, নীল জল, অশ্বত্থের শান্ত অন্ধকার।