আমার হৃদয়

আমার হৃদয়- সে যে মিথ্যা স্বপ্ন দেখে নাই- করে নাই মিথ্যা ব্যবহার
কত দিন- যেন কত শত-শত শতাব্দীর থেকে সে যে বলেছে আমারে
রক্তাক্ত হতেছে যারা পৃথিবীর পথে-পথে- বিচ্ছেদের ক্লান্ত অন্ধকার
যাদের কাঁদায়ে যায়- তারা আসুক চ’লে ঝাউ নিম হিজলের বনানির ধারে

তারা আসুক ভোরে- দু’পহরে- অথবা গোধূলিবেলা- অথবা নিশীথে
পৃথিবীর বনানির পাশে এই- ডালপালা-পল্লবের ছবি কলরবে
তাদের হৃদয়ে যেই অবসাদ জন্মেছে- পৃথিবীর উদাসীন শীতে
যেই ক্ষয় ক্ষতি ব্যথা আরক্ততা জমেছে, এখানে সব শেষ হবে

এখানে বনের পাশে- অশ্বত্থের বিশালতা কোনও দিন দেখে নাই তারা
জানি আমি; কোনও দিন ভালো ক’রে দেখে নাই দেবদারুবীথি
প্রকাণ্ড জামের ডানা ভোরের আলোর গন্ধে দিয়ে যায় সান্ত্বনার সাড়া
অথবা নক্ষত্র এসে আঁকাবাঁকা শাখাগুলো রক্ত মাংস শরীরের স্মৃতি

আমাদের রক্ত মাংস শরীরের স্মৃতি সব মুছে দিয়ে- পথের বেদনা
নীরবে ডুবায়ে দিয়ে- ঝাউ নিম রেনট্রির নক্ষত্রের ছবির জগৎ
ধীরে-ধীরে তুলে ধরে- রক্তাক্ত পথের ‘পরে মুখ গুঁজে তোমরা কেঁদো না
পৃথিবীর পথে গিয়ে খুঁজো না ক’ পথ আর- এইখানে পথ

কৃষ্ণচূড়া কত শত শাখা নিয়ে চেয়ে দেখ চাঁদ আর তারকার পানে
চ’লে যায়- কেমন আশ্বাসে তার ডালপালা নড়ে দেখো- কেমন নীরবে
যে-কথা আমার হৃদয় আজ সত্য ব’লে জেনেছে সব যেন জানে
ঐ কৃষ্ণচূড়া তরু- সৃষ্টির আদিম দিনে- তারও আগে- সে যেন জেনেছিল সব

তাই এত ধীর শান্ত- এত শান্তি বুকে তার- পল্লপবের নীলের ভিতর
নক্ষত্র এসেছে নেমে তাই তার- বনানির পাতায়-পাতায় নীল শাখায়-শাখায়
নক্ষত্র এসেছে নেমে তাই এত- সব-চেয়ে শান্ত ঘুঘু- সব-চেয়ে নির্ভরের ঘর
এখানে খুঁজিছে তাই- সব-চেয়ে ক্লান্ত পাখি ঘুমায়েছে সব-চেয়ে নিমগ্ন পাখায়

এইখানে;- কেমন আশ্বাসে সব ডালপালা নড়ে দেখো- কেমন নীরব
ঐ কৃষ্ণচূড়া ঝাউ- এদের বুক থেকে ক্ষণে-ক্ষণে গভীর ইশারা
নেমে আসে- এ-পৃথিবী মুছে যায়- প্রতিটি শাখার সাথে করি অনুভব
অন্য শান্তি অন্য স্বপ্ন র’য়ে গেছে আমাদের ব্যথা রক্ত কলরব ছাড়া

অন্য কোনও নিরুদ্দেশে: বাতাসে যে পাতা নড়ে পৃথিবীর প্রাণী যেন নয়
ধুলো-কাঁকরের এই দেশ ছেড়ে র’য়ে গেছে আরেক রচনা যেন লুকায়ে কোথায়
রেনট্রির গান শুনে- ঝাউয়ের শাখার দিকে তাকাতে-তাকাতে মনে হয়
বৃষ্টির মেঘের কোলে চকিত রৌদ্রের মতো কার যেন দেখা পাওয়া যায়।