আমার শৈশব

আমার শৈশব আর কিশোর-বেলার দিন সন্ধ্যা ভোরে বুঝেছিল যেই কথা- তাহা-
ভুল নয়- আজও আমি জানিতেছি আমার এ-জীবনের যৌবনের শেষে
একাকী কিশোর আমি ব্যথা পেয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘাস ধান অশ্বত্থের কাছে এসে, আহা
যে-শান্তি পেয়েছি রক্তে সে-সান্ত্বনা চিরকাল পৃথিবীর দেশে

স্থির হয়ে বেঁচে আছে… আজও তা বেঁচে আছে অবসন্ন মানুষের তরে
গোধূলির মেঘ আজও রোজ আসে কমলা জর্দা রাঙা নীল জাফরান
দূর থেকে বলে যেন জীবনের অই পারে কোনও এক কুহকের আরক্ত সাগরে
রূপ নষ্ট হয় না ক’- রক্তিম বাসনা প্রেম পৃথিবীর হেমন্তের দূর্বা আর ধান

কোলে ক’রে কাঁদে না ক’ কুয়াশায়,- অপরাহ্ন-রঙে মেঘ এই সব নিঃশব্দ আশ্বাস
দিয়ে যায়; আমি এই পৃথিবীতে থেকে যেন পৃথিবীর বাহিরে কোথায়
বিকেলবেলার শেষে গোলাপি আকাশ নিয়ে গড়ি এক সৃষ্টির আভাস
সেখানে উদ্যম নাই, ক্লান্তি নাই, রক্ত নাই, সেখানে চিন্তার ব্যথা ভাঙা মন্দিরের মতো ভেঙে যায়

সিন্ধুর ঢেউয়ে,- আমার শৈশব আর কিশোর-বেলার দিন বুঝেছিল যাহা
ভুল নয়; আজও আমি জানিতেছি আমার এ-জীবনের যৌবনের শেষে
পৃথিবীতে রোজ রাত্রে নক্ষত্র নামিয়া আসে- সেই সব নক্ষত্রেরা, আহা
সোনালি মধুর মতো যাহাদের রূপ আমি মাছির মতন ভালোবাসি-

কত রাত জাগিয়াছি শৈশবে কৈশোরে আমি- আজও আমি তাহাদের মুখ দেখি রাতে
আবার গভীর রাতে ফিরে আসি- দেখি আমি তাহাদের মুখ
সোনালি তারার সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে সিঁড়ি আমি পারি না ফুরাতে
তবুও ফুরায়ে যাবে এক দিন সিঁড়ি, জানি- আকাঙক্ষার গভীর অসুখ

এক দিন শান্তি পাবে নক্ষত্রের দেশে গিয়ে- অই দূর নক্ষত্রের দেশে
যে-চোখ দেখি নি আমি কোনও দিন পৃথিবীতে- যেই আলো কান্তারে সাগরে
কোনও দিন ছিল না ক’- পৃথিবীর সব-চেয়ে রূপসির মুখ ভালোবেসে
যেই প্রেম যে-বাসনা শিখি নাই এক দিন জানিব তা ঐ দূর নক্ষত্রের ঘরে।