আয়ুর সময়কাল

আয়ুর সময়কাল যতই সে কাটাতেছে পৃথিবীতে
ততই তাহার দেহ দীর্ঘতর হয়ে যায়- আমাদেরও চক্ষু সন্দিহান
সব-চেয়ে উঁচু তাকে হয়তো সে লুকায়ে রেখেছে
গোপন কলম, বই, মনোবীজ- কঙ্কালের মতন নিরেট
কোনও এক অন্ধকার ষড়যন্ত্র, আহা,
না হলে মানুষ কেন এত দীর্ঘ- দীর্ঘতর বিভা
পেয়ে যায়?- বাংলা’র নরনারী শস্যহীন খেত, চাঁদ
সিনেমাটোগ্রাফ’এ অন্ধ ছবির মতন এসে ঘুরে যায়
যখন মানবাত্মা এই দেশে সহসা পথের পাশে- উঠে
উঁচু এক টেলিগ্রাফ-থামের ভিতরে বললে- দানবীয়তায়
নিজের বিদ্যুৎ স্তব্ধ ক’রে রাখে-। দেখা গেল স্তূপের নিকটে
চার দিন পরে তাকে নির্বাণ নদীর পারে- অন্ধকারে
দাঁড়ায়ে রয়েছে স্থির। সহসা তাহাকে দেখে আমার হৃদয়
লাজুক পেঁচা’র মতো উড়ে যেতে চায় জানু গেড়ে
খাঁড়ির ও-পারে নীল প্রবীণ বাড়ির শীর্ণ কর্নিশের দিকে
পৃথিবীর পরিমিত অন্ধকারে,- কেননা এখানে নদী, প্রান্তর, নগরী
অকস্মাৎ প্রকাশিত হয়ে গেল নিখুঁত চিন্তায় মগ্ন আত্মস্থের কানে
অশ্লীল ঘণ্টার মতো- সূর্যের- শুক্র-বুধ-মঙ্গল’এর।
সমস্ত প্রকাণ্ড পরিমণ্ডলের সম্পূর্ণ বৃত্তের আয়ু জেগে
সকল বিবর্ণ ছায়া ছিঁড়ে ফেলে গাঢ় আলো নিয়ে এল
অবাঙ্ময় অনন্তের চোখের বধির সাদা ডিমিটিকে ডেকে
রশ্মি এঁকে দিতে এল পাখির কাতর কর্নিয়ায়
যেন পাখি পিছু ফিরে যত দূর উড়ে যেতে চায়
পৃষ্ঠদেশ নেই তার- অথবা পিঠের ‘পরে চোখ
প্রগাঢ় অগ্নির দিকে- ব্রহ্মার ডিমের দিকে কেবলই হতেছে সম্মুখীন

তবে সেই দীর্ঘ এক দেহ নিয়ে আমাদের সবার ভিতরে
যে-মানুষ চলেছিল এত দিন- আমরা পলিটিক্যাল ব’লে
সম্ভ্রম করেছি যারে লঘুতায়- স্থির গৃহে- স্তব্ধ হয়ে- রাত্রির ভিতরে
বিদায় দিয়েছি তবু- আবার শরীর তার বায়ু পেয়ে নির্জন আক্রোশে
বিভিন্ন আঁধার থেকে উঠে এল- দীর্ঘ- দীর্ঘতর
অগ্নির আমোদে জেগে একাকী পাখিকে তুলে উন্মোচিত ভূমার ভিতরে
সেই সাধু নিভে গেল অন্ধকার বিম্বে তবু- আমাকে পরাঙ্মুখ দেখে।