বিলুপ্ত যুগে

যেমন বিলুপ্ত যুগে কোনও-কোনও নির্জন মনীষী
অনেক গ্রন্থের মাঝে- চুপে তার নিজের নিমীল ঘরে ব’সে
টের পেত- চিন্তার সংসর্গ শেষে এক দিন মানুষকে একা
ফেলে রেখে চ’লে যায়- তাই তারা রাত্রির ভিতর থেকে এলে
দু’-একটি জীবনকে ডেকে কথা ব’লে শান্তি পেয়ে যেত- চুপে, আহা
টেবিলে নিটোল বাতি জ্ব’লে যেত- চোখ বুজে সে-সব আলোর
হয়তো ধারণা কেউ পেয়ে যায় আজ এত শতাব্দীর পরে
সর্বদা সে-সব দীপ্র গোল পরিমণ্ডলের মতো জেগে উঠে
মনীষীর শরীরকে- আপাদমস্তক- চুপে- আবিষ্কার ক’রে
আমোদিত হয়ে যেত স্তব্ধ হয়ে- তার পর- কোনও এক দ্বিতীয় ছায়াকে
অনুভব ক’রে- যেমন কুকুর কোনও সুদূরের অপরিচিতকে
সহসা প্রভুর ঘরে দেখে ফেলে- স্তব্ধ হয় তবু
যখন হৃদয় তাকে ব’লে দেয়: ‘চিনি আমি- না চেনা অসমীচীন’

ঈষৎ বায়ুর মুখে ঘুরে যেত তাদের চেয়ার
বহু ক্ষণ স্থির হয়ে থেমে থেকে-
আবার অনেক ক্ষণ আরও ঢের স্থিরতর হয়ে অবিকল
থেমে যেত- কোনও এক অকৃত্রিম প্রশ্ন এক ছায়ার নিকটে
ছুঁড়ে ফেলে- কিংবা আরও ততোধিক স্তব্ধতায় হেঁট হয়ে
জিজ্ঞাসার মানে খুঁজে হৃদয়ের অন্তরীণ চিকীর্ষার কাছে।

এখন সে-সব যুগ ক্ষ’য়ে গেছে ঢের দিন- কী তারা পেয়েছে
তারা জানে;- তবুও আমার অনুভব আজ
আজও সেই নিরক্ষর শতাব্দীর অন্ধকারে ব’সে থেকে এক-আধ বার
কোনও এক নিখুঁত প্রকোষ্ঠে ঢুকে- চেয়ারের অবিকল স্থিরতায় থেমে
বাতির আলোর বিম্বে ব্যাপারি বায়ুর মুখে ঘুরে যায়- এক-আধ জন
মানুষের সুস্থিরতা নষ্ট ক’রে দেয় ব’লে- ছায়া হয়ে তবু-।
অথবা সংসর্গ দেয় মানুষকে যখন সে
হাওয়ার ভিতর দিয়ে আপনাকে সঞ্চালিত ক’রে ধীরে
জলের উপর দিয়ে চ’লে গিয়ে- ক্রমে
বহুবিধ মানুষের সাথে মিশে- অনেক গ্রন্থ প’ড়ে অন্ধকারে- তবু
লুক্কায়িত হাড় খোঁজে;- যা হয়েছে, যা হতেছে, অথবা যা হবে
সকলের মাঝে এক গ্রন্থি হয়ে;- শান্ত এক জ্ঞানপাপী বিষয়ীর মতো
তখন তোমার ছায়া আমার পায়ের নিচে কুকুর’কে ফাঁকি দিয়ে থামে
আমার মেঝের ‘পরে। নিরয়ের অন্ধকার থেকে এক মেঘ
হয়েছিল রবাহূত; নিজের জায়গা থেকে তাই সে নীরবে খুলে গিয়ে
চ’লে এল। আমরাও ঢের রাত্রে চেয়ে দেখি গভীর বন্দরে
ছায়ার মতন হাঁটে মানুষেরা- অতিকায় উঁচু এক ক্রেন
অধিক নিবিড়তর ছায়ার মতন তার গোপনীয় কাজ ক’রে যায়।