বহু দিন পৃথিবীর পথে

বহু দিন পৃথিবীর পথে জেগে এই কথা জানিয়াছে আমার হৃদয়
পৃথিবীতে যত ব্যথা- অপেক্ষার যত ক্লেশ- যত দাগ- রক্ত- ভুল- নিষ্ফলতা আছে
নরম ঘাসের দেশে গোধূলির কাছে এসে সে-সব বেদনা সাঙ্গ হয়
ধীরে-ধীরে ব্যথা সব মুছে যায় অপরাহ্নে দেবদারু রেনট্রির নিঃশ্বাসের কাছে

অপরাহ্নে- সন্ধ্যায়- অন্ধকারে- ভোরে-
বহু দিন পৃথিবীতে জেগে থেকে জানিয়াছে আমার হৃদয়
সোনালি আশ্বাসে দিন নিভে গেলে সুগন্ধি রাত্রির পথ ধ’রে
নক্ষত্রেরা নেমে আসে;- সে কোন সান্ত্বনা স্বপ্ন বুকে নিয়ে তাহাদের না আসিলে নয়।

আমার হৃদয় ভুল করে নাই, মিথ্যা স্বপ্ন দেখে নাই আমার হৃদয়
সে কোন শৈশব থেকে- যৌবনে- যৌবনশেষে বার-বার বুঝিয়াছি আমি
পৃথিবীর কলরবে ক্ষুধা লোভে রুক্ষ রৌদ্রে যাহারা ছিঁড়িয়া গেছে- হয়েছে যাদের ক্ষতি ক্ষয়
জীবনের শান্তি স্বপ্ন রহস্যের দিকে তারা এক বার দেখুক-না চোখ মেলে- থামি-

এক বার থেমে যাক, শান্ত হোক,- কেন এই অধীরতা- ছুটিবার রক্তিম পিপাসা
কেবল সন্দেহ কেন- প্রশ্ন কেন- কলরব- আকাঙক্ষা সংগ্রাম হিংসা ভয়
একটি ঘুঘু’র বুকে বকুলশাখার প্রাণে স্থির হয়ে ফুটিবার যেই ভালোবাসা
যেই শান্তি যেই ঢেউ র’য়ে গেছে আমাদের ম্লান মুখে নাই তার কোনও পরিচয়।

সন্ধ্যার শিশিরে ক্ষান্ত মৌচুষকি’র মতো- দূর রাঙা মেঘে বকের মতন
কোনও করুণতা স্বপ্ন মানুষ চেনে না আর- বুঝিতে চায় না আর কিছু
রোদের ভিতর থেকে রোদে-রোদে- ধোঁয়ার ভিতর থেকে গুমোট ধোঁয়ায় তার মন
ধুলোর ভিতর থেকে রক্তাক্ত ধুলোয় আরও ফিরিতেছে শিকারের পিছু

এই শুধু- আমার হৃদয় ভুল করে নাই, মিথ্যা স্বপ্ন দেখে নাই আমার হৃদয়
সে কোন শৈশব থেকে- যৌবনে- যৌবনশেষে বার-বার বুঝিয়াছি আমি
আকাশে যখন ভোর অথবা সন্ধ্যার রং চুপে লেগে রয়
অথবা আঁধার রাতে হৃদয় এ-পৃথিবীর পথ ছেড়ে বহু দূরে চ’লে যায় নামি।

চেয়ে দেখে নীলাভ আকাশ চিল- সাদা মেঘ- অশ্বত্থের একখানা-দুইখানা ডাল
অথবা সমস্ত অশ্বত্থগাছ- (ঘাসভরা মাঠখানা বহু দুর)- নক্ষত্র- রাতের শান্ত বিশ্বাসী শরীর
পেঁচা’র ডানার ঢেউ অন্ধকারে- শিশিরের নীল শব্দ- আম নিম প্রশাখার জাল
জ্যোৎস্না যেন বুনোহাঁস বকুল জামের পিছে- এ-পৃথিবী যেন কোন আসন্ন পরির

মানুষের নয় যেন এ-পৃথিবী- কত দিন দেখিয়াছি বুঝিয়াছি আমি এই সব
মনে হয় অই ডাঙা মঠও তাহা জানে যেন- দিন রাত অশ্বত্থের শাখারা তা জানে
মানুষেরা কোলাহল ক’রে যায়- তবু এই পৃথিবীতে অনেক নীরব
নদী মাঠ নক্ষত্রেরা র’য়ে গেছে রাত্রি দিন রূপ শান্তি স্বপ্নের সন্ধানে-