বলিল অশ্বত্থ সেই

বলিল অশ্বত্থ ধীরে: ‘কোন্‌ দিকে যাবে বলো-
তোমরা কোথায় যেতে চাও?
এত দিন পাশাপাশি ছিলে, আহা, ছিলে কত কাছে;
ম্লান খোড়ো ঘরগুলো- আজও তো দাঁড়ায়ে তারা আছে;
এই সব গৃহ মাঠ ছেড়ে দিয়ে কোন্‌ দিকে কোন্ পথে ফের
তোমরা যেতেছ চ’লে পাই না ক’ টের!
বোঁচকা বেঁধেছ ঢের,- ভোলো নাই ভাঙা বাটি ফুটা ঘটিটাও;
আবার কোথায় যেতে চাও?’

‘পঞ্চাশ বছরও, হায়, হয় নি ক’- এই তো সে-দিন
তোমাদের পিতামহ, বাবা, খুড়ো, জেঠামহাশয়
-আজও, আহা, তাহাদের কথা মনে হয়!-
এখানে মাঠের পারে জমি কিনে খোড়ো ঘর তুলে
এই দেশে- এই পথে- এই সব ধান নিম জামরুলে
জীবনের ক্লান্তি ক্ষুধা আকাঙ্ক্ষার বেদনায় শুধেছিল ঋণ;
দাঁড়ায়ে-দাঁড়ায়ে সব দেখেছি যে- মনে হয় যেন সেই দিন!’

‘এখানে তোমরা তবু থাকিবে না?- যাবে চ’লে তবে কোন্‌ পথে?
সেই পথে আরও শান্তি- আরও বুঝি সাধ?
আরও বুঝি জীবনের গভীর আস্বাদ?
তোমরা সেখানে গিয়ে তাই বুঝি বেঁধে র’বে আকাঙ্ক্ষার ঘর!…
যেখানেই যাও চ’লে, হয় না ক’ জীবনের কোনও রূপান্তর;
এক ক্ষুধা- এক স্বপ্ন- এক ব্যথা বিচ্ছেদের কাহিনী ধূসর
ম্লান চোখে দেখা দেবে যেখানেই বাঁধো গিয়ে আকাঙ্ক্ষার ঘর!’
-বলিল অশ্বত্থ সেই ন’ড়ে-ন’ড়ে অন্ধকারে মাথার উপর।