বৃক্ষ

মৃগতৃষ্ণার পিছে ধাবমান হওয়া নয় আর;
ইন্দ্রধনু ধরবার মতো মূঢ় মন;
বিহ্বল আলোর পরে আসে যেই পতিত আঁধার;
কেবলই অন্ন গ্রাস- শাশ্বত গ্রাসাচ্ছাদন;
আস্তে সরিয়ে রেখে, মুখ থেকে রক্তের ফেনা,
পায়ের নীচের থেকে ক্ষমতা-যশের মরুভূমি
ফেলে দিয়ে হে হৃদয়, কখন বসবে,
কয়েক মুহূর্ত নীল শ্যামল বৃক্ষের নিচে তুমি?

চারি দিকে ব্রহ্মাণ্ডের উজ্জ্বল আতপ:
অগ্নির অমৃতভাণ্ড ব’লে মনে হয়;
অকূল আগুনে ম্লান ক’রে বৃক্ষ শান্ত স্নিগ্ধ সিদ্ধার্থ পল্লব,
হরিৎ সোনালি নীল সৌম্য তন্ময়।
আকাশকে নিরালম্ব ক’রে দিয়ে বোমারু বিমান
উড়ে যায়- পুনরায় প্রাণসাগরের শত ভাষা
মর্মরিত হয়ে ওঠে;- কোন্ কথা বলে দূর নীল?
আর এই হরিতের কী মহাজিজ্ঞাসা।

রক্তাক্ত নদীর তীরে কালো পৃথিবীর
দাঁড়িয়ে রয়েছে মৌন বৃক্ষের একমুঠো আলো;
সনাতন শূন্যের অন্বেষণে দিন-অনুদিন
যে সঞ্চিত মানবতা আজ প্রায় শূন্যে ফুরাল-
অনুভব ক’রে সব মানুষ তবুও
মৃত্তিকায় মূল রেখে,- লক্ষ্য রেখে আদি নীলিমায়
শ্যামল গাছের থেকে অবিনাশ ধর্ম শিখবে
অথবা নশ্বর প্রেম ভালোবেসে বসবে ছায়ায়?

চারি দিকে দ্রুত অন্ধ সাগরের ঝকঝকে হাসি;
অনন্ত প্রবহমান রক্তক্ষরা জল;
জীবনের জয়গান- মরণের যে লাবন্যরাশি
দুলে ওঠে আকন্যাকুমারী হিমাচল:
সে সব অসত্য নয়, সত্য নয়, ফল নয়, নৈষ্ফল্য নয়;
যত দিন র’য়ে গেছে মানুষ ও মানুষের মন-
নিমিত্তের ভাগী হবে মানবের রক্তাক্ত হৃদয়;
হরিতের কাছে এসে শুনবে অক্ষয় গুঞ্জরণ।