কনভেনশন

প্রথম বক্তা:
এ-যুগের,- আমাদের এ-যুগের
জন্ম হয়েছিল বটে শূকরীর পেটে
কলম ছেড়েছি তাই অসূয়ায়
কেননা খড়্গের সাথে এঁটে
এখন কলম কাৎ র’বে ঢের দিন
তার পর যখন সে মনীষীর হাতে
ধরা দেবে পুনরায়- ঢের দিন কেটে গেল ব’লে
তখন বেবুন ছাড়া কে উঠেছে মনীষীর জাতে?

দ্বিতীয় বক্তা:
পৃথিবীতে ঢের দিন টেকা গেল
সভা-সমিতির ফাইল নেড়ে
জলের গেলাসে স্বচ্ছ সূর্যকে রেখে।
মদের পিপেয় সব বাছুরকে ছেড়ে
মনে হয়েছিল যেন যত পিপে রয়ে গেছে
আর যত বাছুরের লোম
ঘাঁটিতে-ঘাঁটিতে তারা রয়ে গেছে ব’লে
আমাদের চামড়ার জুতোও নরম।
সে-সব বাছুর তবু এত দিনে ষাঁড় হয়ে গেছে
মদের পিপের থেকে (শেষ অবলেপ সব) উঠে
চাঁদের আলোয় সব গোল হয়ে বসে
আবার নতুন কিছু মাল গেছে জুটে।
তা না হলে দেবদূত হয়ে যেত এত দিনে সব
আমাদের মর্মরের মতন ছিলিঙ্
ভ’রে যেত তাহাদের ধবল শপথে
আমাদের চুল থেকে বার হত শিঙ্।

তৃতীয় বক্তা:
সমিতিতে- কাউন্সিলে- গ্যালারিতে যে-সব মানুষ
সময় কাটায়ে গেছে আমাদের বক্তৃতা শুনে
প্রত্যক্ষদর্শীর মতো তারা যেন সব
আমাদের উড়ে যেতে দেখেছে বেলুনে।
সময় গিয়েছে কেটে বিবেকের গোলানো তৃপ্তিতে
কথা ব’লে- কথা ব’লে- কথা ব’লে- তবুও এখন
আমাদের চেয়ে ঢের হালুবালু ভালো জানে ব’লে
বেবুন চালাবে মাইক্রোফেন।

চতুর্থ বক্তা:
চেয়ে দেখি চারি-দিকে আজ
যাদের চোয়ালগুলো লণ্ঠনের মতো
গরিলা বানাতে গিয়ে নিসর্গ যাদের
মানুষ বানাল প্রথমত;
কারণ, অনেক কাজে লিপ্ত থেকে ন্যূব্জ নিসর্গ
মাঝে-মাঝে ভুলে যায় ইঞ্চি-ইঞ্চি স্তর-
প্যারাসুট বেয়ে তারা নারী আর ধর্মযাজকের মতো নেমে
সূর্যের আলোর নীচে সব-চেয়ে বিখ্যাত রগড়।
তবু এরা মদ পেলে খুশি হয় খুব
নির্মল ভাঁড়ের মতো রসিকতা জানে
যদি কোনও শান্তির দেবতা নেমে এসে ইহাদের
মাথা ধ’রে কান টেনে আনে
আজ তবু ভুল ক’রে দশ জন নারী মেরে
এক জন দালালের ঋণ করে শোধ
যেন শুধু সরমাকে নগ্ন ক’রে সারমেয়দের
চাঁদের আলোর নীচে সব-চেয়ে বিখ্যাত আমোদ।

পঞ্চম বক্তা:
তবুও ঘোষণা ক’রে চ’লে যাই-
ধরেছি অনেক মাছ স্ফটিকের মতো সাদা জলে
নির্জন পবিত্র রৌদ্রে ঘুরায়েছি সাটিনের ছাতা
পরিশ্রান্ত পা দু’টোকে ঢুকায়ে চপ্পলে
ডোরাকাটা জামা গায়ে ঢিলে ক’রে নিয়ে
বিবেক ব্যথিত হয় ব’লে আঁট নেকটাই খুলে
সাদা মোম জ্বেলে নিয়ে ঘুমোবার আগে
হঠাৎ দেখেছি শিঙ্- চুলে।

ষষ্ঠ বক্তা:
কিছু নয়- লঘু অবলেপ শুধু- দু’-এক নিমেষ
এ-যুগের জন্ম হয়েছিল তবু খানার ভিতরে
যখন বাজার বেশ শান্ত হয়ে র’বে
অতিরিক্ত তেজি হয়- মন্দি হয়ে পড়ে
যখন সবের কাজ ন্যস্ত র’বে শ্বেতাশ্বতর-শান্ত ঘুঘুর মতন
ব্যাঙ্ক, বুলিয়ন, কাঁচা-পাকা মাল নিয়ে
পরস্পরের সব মুকুরের মতো মুখে চোখ চেয়ে দেখি
আমার কানের দিকে থতমত খেয়ে কেন রয়েছি তাকিয়ে।

পঞ্চম বক্তা:
(উপসংহার)
এখন উইল ক’রে চ’লে যাই তবু
হয়তো-বা কোনও এক অতীতের তরে-
তবু আমি আশাস্থির- বর্তমান টপকায়ে
অতীতই তো আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে
এখন উইল ক’রে চ’লে যাই-
ছাতা, লাঠি, অমুকের হ্যাভেনা- দলিল-
সুন্দর জিনিস সব- বিপর্যস্ত এই পৃথিবীর-
এখন ভূতের হাতে খেয়ে গেল কিল।
আমাদের গালের একটি আঁচিল যেন তবু
আমাদের নাসিকার সরলরেখার মতো ডাঁশা
আমাদের জাহাজের- উড়োজাহাজের
লস্কর ও মিস্ত্রিদের জ্ঞাপন করেছে ভালোবাসা
যদিও পৃথিবী আজ আমাদের টেনে নেয় জঙ্গলের দিকে
ব্রডকাস্টও ব্যবহার ক’রে যায় বেবুনের ভাষা
আমাদের জাহাজের- উড়োজাহাজের
লস্কর ও মিস্ত্রিদের জ্ঞাপন করেছি ভালোবাসা।
কেননা আমরা পড়েছি ঢের বিজ্ঞান ইতিহাস-
অধমর্ণ কখন ঘুরেছে উত্তমাশা?
আমাদের জাহাজের- উড়োজাহাজের
লস্কর ও মিস্ত্রিদের জ্ঞাপন করেছি ভালোবাসা।
আমরা দেখেছি ঢের সমাজের ভাঙন-গড়ন
বিপ্লবের সূত্রগুলো ভুল গণিতের মতো ভাসা-ভাসা
আমাদের জাহাজের- উড়োজাহাজের
লস্কর ও মিস্ত্রিদের জ্ঞাপন করেছি ভালোবাসা।
মানুষের সভ্যতা বিজ্ঞান ধর্ম: রাজমুণ্ডু ঘিরে
দীনারের মতো গেল- অকৃত্রিম গোল হয়ে আসা।
আমাদের জাহাজের- উড়োজাহাজের
লস্কর ও মিস্ত্রিদের জ্ঞাপন করেছি ভালোবাসা।
সভ্যতাকে ভেঙে দিতে চায় যারা দাঁত বার ক’রে
তাহাদের হালুবালু জঙ্গলের ভাষা।
আমাদের জাহাজের- উড়োজাহাজের
লস্কর ও মিস্ত্রিদের জ্ঞাপন করেছি ভালোবাসা।

অনুক্ত। শ্রাবণ-আশ্বিন ১৩৬৪