ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল

ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল,-
ডালিম-ফুলের মতো ঠোঁট যার, রাঙা আপেলের মতো লাল যার গাল,
চুল যার শাঙনের মেঘ, আর আঁখি গোধূলির মতো গোলাপি রঙিন,
আমি দেখিয়াছি তারে ঘুম-পথে, স্বপ্নে- কত দিন!
মোর জানালার পাশে তারে দেখিয়াছি রাতের দুপুরে-
তখন শকুন-বধূ যেতেছিল শ্মশানের পানে উড়ে-উড়ে!
মেঘের বুরুজ ভেঙে অস্ত-চাঁদ দিয়েছিল উঁকি,
সে কোন্‌ বালিকা ‌একা অন্তঃপুরে এল অধোমুখী!
পাথারের পারে মোর প্রাসাদের আঙিনার ‘পরে
দাঁড়াল সে- বাসর-রাত্রির বধূ- মোর তরে, যেন মোর তরে!
তখন নিভিয়া গেছে মণিদীপ- চাঁদ শুধু খেলে লুকোচুরি,-
ঘুমের শিয়রে শুধু ফুটিতেছে-ঝরিতেছে ফুলঝুরি, স্বপনের কুঁড়ি!
অলস আঢুল হাওয়া জানালায় থেকে-থেকে ফুঁপায় উদাসী!
কাতর নয়ন কার হাহাকারে চাঁদিনীতে জাগে গো উপাসি!
কিঙ্খাবে-গালিচা-খাটে রাজবধূ-ঝিয়ারির বেশে
কভু সে দেয় নি দেখা- মোর তোরণের তলে দাঁড়াল সে এসে!
দাঁড়াল সে হেঁটমুখে- চোখ তার ভ’রে গেছে নীল অশ্রু-জলে!
মীনকুমারীর মতো কোন্ দূর সিন্ধুর অতলে
ঘুরেছে সে মোর লাগি!- উড়েছে সে অসীমের সীমা!
অশ্রুর অঙ্গারে তার নিটোল ননীর গাল, নরম লালিমা
জ্ব’লে গেছে- নগ্ন হাত, নাই শাঁখা, হারায়েছে রুলি,
এলোমেলো কালো চুলে খ’সে গেছে খোঁপা তার, বেণী গেছে খুলি!
সাপিনীর মতো বাঁকা আঙুলে ফুটেছে তার কঙ্কালের রূপ,
ভেঙেছে নাকের ডাঁশা, হিম স্তন, হিম রোমকূপ!
আমি দেখিয়াছি তারে, ক্ষুধিত প্রেতের মতো চুমিয়াছি আমি
তারই পেয়ালায়, হায়!- পৃথিবীর ঊষা ছেড়ে আসিয়াছি নামি
কান্তারে;- ঘুমের ভিড়ে বাঁধিয়াছি দেউলিয়া বাউলের ঘর,
আমি দেখিয়াছি ছায়া, শুনিয়াছি একাকিনী কুহকীর স্বর!
বুকে মোর, কোলে মোর- কঙ্কালের কাঁকালের চুমা!
-গঙ্গার তরঙ্গ কানে গায়,-‘ঘুমা,- ঘুমা!’
ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল-
ডালিম-ফুলের মতো ঠোঁট যার, রাঙা আপেলের মতো লাল যার গাল,
চুল যার শাঙনের মেঘ, আর আঁখি গোধূলির মতো গোলাপি রঙিন;
আমি দেখিয়াছি তারে ঘুম-পথে, স্বপ্নে- কত দিন!