দেহের রহস্য থেকে

দেহের রহস্য থেকে খ’সে গিয়ে ফাল্গুনের রজনীর কুয়াশায় উড়িলাম
নিম্নে প’ড়ে আছে মোর শব
অন্তরীক্ষে দেখা গেল সাদা এক প্রাসাদের থাম
অনেক ধূপের ঘ্রাণ- কপালে সুস্বাদু এক মানবীয় ঘাম
তোমার বিনুনি, প্রিয়ে, বিস্তীর্ণ বাতাসে উড়ে আমারে করিল অনুভব

কয়েকটা ঘৃতদীপ জ্বলিতেছে- কবে যেন জ্বলেছিল লক্ষণাবতীতে
পদ্মা’র ও-পারে কবে- ধলেশ্বরী পার হয়ে কোনও এক যুবা-সদাগর
অন্ধকার রজনীতে এই সব প্রদীপের ‘পর
করেছিল নির্ভর এক দিন;- কবেকার সে ধূসর ঘৃতে
এত শতাব্দীর পর আজও আভা, রানি, পারে কি জ্বালিতে

কোনও কথা বলিল না সেই মুখ- মৃতা- তবু আজও সে-আনন
মৃত্যু কিছু করে নাই প্রেম আর হৃদয়ের ক্ষতি
ঘিয়ের আভায় তার অবয়ব-ইশারার জ্যোতি
শিরীষ ফুলের মতো: যখন জ্যোৎস্নার শিহরন
নদীর তরঙ্গে ঝরে পৃথিবীতে- শান্তি পায় প্রান্তরের সাদা-সাদা, ঘোড়াদের মন

গুগগুলের ধোঁয়া থেকে ঐ দূর নিচু পৃথিবীর
উঠিয়া এসেছে যেন ঊর্ধ্বে এই নারী
ঋষিরা যা চেয়েছেন যেই সব অন্ধকার- মৃত্যু অপসারি
তবুও সে নরকের বেদনার মন নিবিড়
কালো চুলে কথাহীন- এই স্বর্গ? অথবা এ বাসনার দুর্গ ঈশ্বরীর?

অন্ধকার এই রাতে বোল-স্নিগ্ধ আমশাখা কেটে নিয়ে চিতা
মাটির নির্জন জঙঘা জ্বালাতেছে পৃথিবীর আত্মীয়জনেরা
কেউ ভাবে: আত্মা তার এত ক্ষণে নক্ষত্রের শান্তি দিয়ে ঘেরা
কেউ ভাবে: মানুষের আত্মা শুধু তেলের পলিতা
মৃত্যু তবু আবিষ্কার: সুমুখে দাঁড়ায়ে তার অনবসিতার মতো মৃতা

আলোকে বিনুনি তার বায়ুপায়ী গোক্ষুরা’র মতো
স্থির হয়ে; নির্জন হৃদয় তার করিতেছে স্মৃতি উপাসনা
স্বর্ণগোধিকার মতো থেমে;- জাদুঘরে স্বপ্নের সাধনা
অনন্ত কালের তরে এইখানে জন্ম লয় যেন অবিরত
দু’জনার স্বপ্ন ভেঙে তবু সে বলিল: তুমি কী চাও বল ত?

ঝাপসা একাকী হাত আমার বুকের ‘পরে রেখে
বলিল সে: পৃথিবীর মৃত্তিকায় ভস্ম হয়ে গেছ চির-দিন
আমার এ-বিনুনিতে নরকের কালো মেঘ- বৈকুণ্ঠের তৃণ
আমার পায়ের নিচে- মৃত নদী জেগে উঠে যখন স্তনের ভারে মানবশবেরে ফেলে ঢেকে
ব্রহ্মস্বাদ পায় শব- ‘অসতো মা সদ্গময়’ ব’লে আর কোনও দিন ওঠে না ক’ ডেকে।