ঢের দূরে

ঢের দূরে- কোনও এক মেরুর প্রদেশে
র’য়ে গেছে অনেক বরফ
মাঝে-মাঝে লুব্ধক তারার আলো পেয়ে
সেইখানে হয়তো-বা যায় অম্বরীষ, শুনঃশেফ
আরও ঢের পৃথিবীর পুরাতন ঋষি
যাদের মাংসের থেকে বল্কলের ঘ্রাণ
এক দিন পাওয়া যেত। দাহ্য কাগজের মতো।
আজ তারা প্রতিবিম্ব। হিমের সন্তান।

যারা এই পৃথিবীতে তৃপ্ত হয়
অনর্গল জ্যোতির্ময় সমুদ্রের সুরে
সেই দূর বরফের দেশে তারা
এক বার আধ বার উদ্ভাবন ছুঁড়ে
তার পর ঘরে ফিরে রক্ত সিলমোহরের সাজে
সুগন্ধি, গরম, লোল লাক্ষা জ্বালায়
যত দিন সৌর গ্লানি তিসি’র বীজের মতো;
নিবিড় সোনালি রশ্মি জীবাণুর নৃত্য চালায়।

তবুও নীহার থেকে হয়েছে মেধের জন্ম
জন্মেছে নীহার থেকে মন
যদিও নবীন নব অন্বীক্ষায়
ঢের চালায়েছে জিহ্বা বৈশম্পায়ন;
চিবায়ে হাড়ের মতো ত্রিকালজ্ঞ অনেক ঋষিকে
এখনও রয়েছে বেঁচে দিকহস্তীদের পিঠে, বিভা:
তবুও নীহার থেকে জন্মেছিল
সেই স্বর্বেশ্যার সনাতন মহিলাপ্রতিভা।

এইখানে মুকুরিত হয়ে ওঠে অমায়িক নদী
যেন কোনও কুয়াশা-চাদর মৃদু নেড়ে জাদুকর
তিনটি প্রশ্ন করেছিল এক মহান ভূতকে
পেয়েছিল জলের মতন স্বচ্ছ নির্জন উত্তর
কেন পিরামিড গড়ে? মনের জ্যামিতি শান্তি চায়।
কেন পিরামিড ভাঙে? জ্যামিতির আয়ুবৃদ্ধি হয়।
কেন পিরামিড গড়ে পুনর্বার?- সস্মিত মহান ভূত
না হলে কি হত এত প্রশ্নোত্তরময়।

মিনারের জানালায় রয়ে গেছে তাই ধাতা
সূর্যের সোনালি বিম্বে জীবাণুর নাচ;
আমি হস্ত প্রসারিত ক’রে দেই
বায়ুর ভিতরে এক মিতাক্ষর ময়ূরের ছাঁচ
স্বেচ্ছায় গ’ড়ে ওঠে- হয়তো সে সব-চেয়ে শ্রেয়
অনেক কঠিন তর্ক ক’রে আমি হয়ে গেছি ক্রূরতম সাপ
ময়ূরের পায়ের নখরে তাই হিম, অবজ্ঞেয়

নির্বিষ প’ড়ে আছে- ধবল ক্বাথের ছবি দেখা যায় ধীরে
দূর এক মেরুর প্রদেশে
সেইখানে সুগভীর পারম্পর্য র’য়ে গেছে
বরফমুণ্ডের ঢের- পরস্পরের দেহ ঘেঁষে
যেন কোনও সৌন্দর্যের অবতার
এই সব পিণ্ড লয়ে চির-দিন করিতেছে ক্লেশ
শুনঃশেফ, অম্বরীষ, যাজ্ঞবল্ক্য মাঝে-মাঝে
এই সেই নীহারের করিতেছে জানু নির্দেশ।