ডাইনোসরের মতো প্রকাণ্ড

ডাইনোসরের মতো প্রকাণ্ড বাসের স্ফীতি আর এক বার এল ছুটে
ভালো ক’রে দেখে নিল সোমনাথ- কোনও পক্ষীজননীর পুটে
ডিমের মতন হিম বুজে থেকে শান্তি সে চায় না ক’ কভু
আমারে তো চেন তুমি, নিরুদ্দেশ, বলিল সে, তোমারে চিনি না আমি তবু
বিড়ালছানার মতো মাঝে-মাঝে খেপে গিয়ে থাবা মারি তাই
আমরা অনেক নিচে ব’সে থেকে ভালোবাসি খানিকটা জৈবিক লড়াই
রূপসির পিঠ জুড়ে ডাঁশা লেবু ছুঁড়ে ফেলি- আমার মুখের ‘পরে প্রিয়া
পচা লেবু ছুঁড়ে মারে, অথবা বালিশ ছিঁড়ি- কিংবা যারা নাক ডাকে চুপে-চুপে
তাহাদের নাক যেন চাকু দিয়ে কেটে ফেলি- তবুও আস্ত থাকে নাক, থাকে নাসিকার হাঁক
চাকু তবে বাতাসের?- এই নিয়ে দু’দিনের খানিকটা বাতাসি দেমাক
জানি তুমি ভালোবাস- উৎকেন্দ্র- নষ্ট তুমি করিবে না (যত দিন বেঁচে আছি) কভু
চল্লিশ বছরে আমি হই নাই কিছু আজও- জানি আমি তবু
মন্থলি টিকিট কিনে সারা-দিন বাসে ছুটে খানিকটা হবার আস্বাদ
পাওয়া যায়- বাসের জানালা থেকে দেখা যায় আকাশের ত্রয়োদশী চাঁদ
মনুমেন্ট-মিনারের শিরে এসে নীরবে দিতেছে যেন খানিকটা রুপালি নির্দেশ
কতগুলো তারা যেন আকাশের সমতল শস্যখেতে এক ভিড় সাদা স্নিগ্ধ মেষ
খেতেছে স্বর্গীয় যব- বলিল সে: আপনার টিকিট দেখি তো
দেখালাম;- আমার মুখের দিকে তাকায়ে সে ভীত
যেন সে ভাবিছে মনে আমার আকাশ-ফুল ছিঁড়ে ফেলে নি তো
আমার সমস্ত চুল ব’খে গেছে- ছিঁড়ে গেছে জামা-পেন্টালুন;
মাথা ঠান্ডা; তবু যেন মনে হয় সারা-দিন অনেক করেছে গুম-খুন
তবুও অনেক খুন বাকি আছে এই ভেবে মুখ যেন চুন
মাথায় বাঁদরটুপি- ইঁদুরের মতো নোংরা- ভয়ানক কালো আর বেঁটে
জীবন লভেছে যেন শুয়োরের জরায়ুতে এক দিন- বিড়ি আর চিনেবাদামের গল্প ঘেঁটে
মৃত নয়- ভীত নয়- লাল-বর্ণ চোখে তার- প্রাণ তার রক্তে উজ্জীবিত
যদিও বাঙালি তবু সারা-দিন হিন্দি বলে… বিড়ি টেনে জিহ্বা নয় তিতো
(মনে হল) পঞ্চমীর চাঁদ যেন আকাশ-সোফায় শুয়ে করে লিকলিক
মনে ভাবে: আমারও কি হতে হবে এই ট্রাম-চেকারের মতন অলীক
(চাঁদ ভাবে) সব ভাইটামিন যেন চুরি ক’রে নিয়ে গেছে তার
শেষ চিনেবাদামের খোসা-হাতে ভয়ানক কালো এক- বেঁটে এক- ট্রামের চেকার।

যদিও পড়েছি প্লেটো- পতঞ্জলি- বৈষ্ণবকবিতা আমি ঢের
তবু যেন মনে হল আকাশের তারাগুলো নয় আর কাশ্মীরি জ্যোৎস্নার মেষ
কতগুলো কসাইয়ের গোরু যেন: শিং-ভাঙা- ডিগডিগে- ক্লান্ত: নিরুদ্দেশ:
চেনে না ক’ পরিবেশ- জানে না ক’ কী চায় তাহারা
স্বপনের মই বেয়ে- মই বেয়ে- তবুও ধরিতে চায় কারা ঐ নীলিমার তারা
দেখিলাম চঙ্গের ধাপে-ধাপে চড়িতেছে বায়ুরোমন্থন ও কয়েকটি বুড়া
এমন নিস্তব্ধ তারা- নিরাবিল- আমাদের পিতামহ- পিতা- আর খুড়া-
কবেকার জাপানের বাগানের কয়েকটা বধির সাকুরা
ফুটে উঠেছিল কবে- ভেসে চ’লে গেল যেন টাকা সোনা বিশ্বাসের বলে
চেকারকে ফেলে রেখে হিন্দি আর বাঁদর-টুপির টাইট ইঁদুরের কলে।

(ইচ্ছে করে কোনও এক আকাশের ল্যাম্প আমি ধরি গিয়ে
ঠিক চঙ্গের উপরে দূর চঙ্গে চ’ড়ে কোনও এক গল্পের ভাঁড়ের উল্লাসে
চারি-দিকে নক্ষত্রেরা জোনাকির মতো তার নাক ঘিরে কান ঘিরে ভাসে)