এবার আগুন জ্বালো

এবার আগুন জ্বালো- স্থবির হয়েছে বড়ো
রক্তে তার অগ্নি নাই আর
সন্ধ্যার অন্ধকারে সেই সব বাদুড়েরা
বোরোবুদুরের দিকে উড়ে যায়
আরও দূর দ্বীপপুঞ্জে
আরও দূর সমুদ্রের পারে
তাহারে চায় না তারা আজ আর অঘ্রাণ আঁধারে
মার্কো পোলো ভ্রমণ করে না আর
বুদ্ধি আর নাগবালি- সমীচীন তরবার
কোথায় দিয়েছে রেখে
রেশমে জড়ায়ে গিয়ে হয়তো-বা কোনও ভাঁড়
গম্বুজের নীচে ব’সে নদীদের ডেকে
দিয়েছে বিছায়ে সব জোনাকির ভিড়ে
সেই কঠিন থাবার।

বসন্তের ভোর আসে- তবুও রক্তে শীত

বালিদ্বীপ নর্তকীর মতো ঘুরে
কোস্ট্রল দিগন্তের শূন্যে ফুরায়
মুমূর্ষু নক্ষত্র আছে সূর্যের পিছনে
জ্যামিতির সব মূর্ধা শেষ করে- অবশেষে
সরলরেখার টানে দিগন্তরে ভেসে
নীড়ে চ’লে এসে
পিতামহ সেই স্তব্ধ দেশে চ’লে গেছে
পুষার পিছনে
রৌদ্র তবু চিরদিন- রৌদ্র তবু সন্ততির মনে।

মনে হয় দার্শনিক বলেছিল
যেন সব পৃথিবীর জল
মাংসের সমবায় নয় শুধু
কিংবা শূন্য মরুভূর
মেধাহীন উটপাখিদের মতো রক্তচঞ্চল
তাহলে কি অন্ধকার গহ্বরের থেকে
তাদের নির্গম হ’ত মনীষীর ক্ষুরধার চোখে
আমলকী দৃঢ় করে নেমে এসে অসমাপ্ত রৌদ্রের ফলকে
আর কি ফিরে যেত অন্ধকার গুম্ফাকে ডেকে।

তবু তারা নিভৃত গভীর
তৃষ্ণা পেলে ভ’রে দেয় অন্ধকারে- কাচের গেলাস
নিভৃত মেধাকে তবু করে না ক’ ফাঁস

দেখেছি অনেক জল ফাল্গুনের নদীর ভিতরে
আমরা শিশুর মতো তাহাদের কাছে যেন
অথবা শিশুর মতো আমাদের তারা মনে করে
সেই সব ভারতীয় রহস্যের সাজিকারা যেন
কালো ঘোমটায় টেনে নিথর নাসিকা
বহিতেছে দিনরাত- অবিদিত-
মধুত্থের শিখা।

আমাদের লঘু চোখে যেইটুকু ধরা পড়ে
আমাদের সভ্যতার হৃষ্ট পরিমাণ
তাহাকে কাকের মতো ক’রে যায় ম্লান
মাছরাঙাদের মতো ডুব দেয় মাংস পাবে ব’লে
সেতু ক’রে রাখে টান

এইসব অবান্তর কথা ভেবে জল
আমাদের থেকে তার দূরত্বের ব্যবধান
করে আরও প্রগাঢ়- সফল
মাঝে-মাঝে অতিকায় দার্শনিক যেন
কৃষাণের সন্ততির তরে
লঘুমুখে খই হয়ে ঝরে
তারপর চ’লে যায় দূর স্বাদ- প্রতিভার দেশে
স্তব্ধতর পিরামিডে
গোলকধাঁধাঁর মতো হেসে।

কফিনে জড়ানো মমি এতদিনে পেয়ে গেছে টের
ইন্যুসিয় আমাদের চেয়ে আরও দৃঢ় রহস্যের
তবুও সে পুলস্ত্য পুলহ আর নির্গুণের মানস সন্তান
আজ রাতে শুয়ে-শুয়ে জলের নিবিড় অভিযান
অমৃতের মতো শোনে

কোথায় রেখেছে কেন্দ্র অন্ধকারে পেন্যুম্ব্রার গর্ভের ভিতরে
অথবা কে সৈনিক সঙ্গীন রেখে মাঝরাতে রোমাঞ্চিত হয়
মরুভূর গবলিন সর্পিণীর মতো নদী দেখে পায় ভয়
প্যাগোডার পাশে ধর্মযাজিকারা অনুধ্যান করে

সূর্যগ্রহণের সন্ধ্যা মধ্যাহ্ন আকাশে
নদীর জলের থেকে দূর হ্রদে গ্রাসে
আমারেও। কোষ্ট্রল, বিদায় তারে
স্ফটিকের মতো রৌদ্রে- লৌহ কারাগারে।