এখন এ-পৃথিবীর

‘এখন এ-পৃথিবীর গোধূলি-সময় আর আমাদের হৃদয়ের যেন বেলাশেষ-‘
ব’লে সে তাকাল; চোখে করুণা রয়েছে তার;
আকাঙ্ক্ষার সে সব আবেশ
নেই আজ; বললে, ‘কাঁকর-রাঙা পথ এই- এই পথ গেছে কত দূর?
শুকনো জামপাতাগুলো প’ড়ে আছে- এই সব পাতা আমি ভালোবাসি- কেমন মধুর
অঘ্রান মাসের গন্ধ লেগে আছে এ-সব পাতায়
মাটি আর সূর্যের।- বাসনায় শুধু ক্লান্তি- আজ মনে হয়-‘
হাত তার মনে হল ভিজে- হিম- এক-আধ মুহূর্তের ছোঁয়ার ভিতর;
উষ্ণতা নেই ক’ চোখে- শান্ত আলো;- দু’-একটা ঝরা পাতা আধোখসা বিনুনির ‘পর প’ড়ে আছে-
আমাকে সে: ‘চলো ঐ ভরা ঘাসে ঐখানে প্রান্তরের পথে;
কমলা রঙের মেঘে নরম আলোর ঐ নিজের জগতে;’
আকাশের থেকে যেন ধীরে-ধীরে শান্তি ঝরে- পৃথিবীর বুকে যেন ধীরে;
দেখলাম সাদা হাত- কেমন সম্পন্ন হিম- স্নিগ্ধ সব রোমকূপ- নিখুঁত শরীরে
স্বভাবকে অতিক্রম ক’রে ফেলে রক্তের ইঙ্গিত মুখে গালে
নেই আজ; হৃদয় শান্ত স্থির; পৃথিবীতে যেন কোনও কালে
রাত্রি ও ভোরের স্বচ্ছ সত্য যাতায়াত ছাড়া নেই আর কিছু;
দু’জনে মাঠের পথে নেমেছি- হাঁটছি- চেয়ে দেখলাম মুখখানা নিচু;
দেখছে পথের দূর্বা ধুলো ঢিবি পাতা ঝাউ-ফল;
তাকাতেই মৃদু হেসে ঘাসের কোলের থেকে লুটোনো আঁচল
তুলে শিশিরের জলে চলল মুছে ধীরে
প্রকৃতির পূর্ণ দানশীলতার মতো তার গভীর শরীরে
পাশাপাশি হাঁটছিল;- তখন নক্ষত্র ঢের এসেছে আকাশে।
আমার হৃদয়ে প্রেম- ধীরে-ধীরে বাসনার নিশ্চয়তা আসে।
হয়তো তা বুঝেছে সে- তবু তার দিক থেকে যে চেতনা সাড়া
পেলে- অর্থ পেয়ে যেত হৃদয় মৃত্যুর অর্থ ছাড়া
সে-প্রেম শরীর থেকে ফুরিয়ে গিয়েছে আজ তার;
গেছে যে, জানে না তা সে- এই মাঠ রাত্রি প্রকৃতির স্নিগ্ধতার
চেয়ে কোনও অন্য অপরূপ মূল্যে আলো
বেশি যদি থেকে থাকে তার চেয়ে ভালো
সেই জ্ঞান আমার এ-হৃদয়ের নিজের অমতে
তবু মুছে পাশাপাশি হেঁটে চলা নক্ষত্র ও শিশিরের পথে।

চতুরঙ্গ। আষাঢ় ১৩৬০