এখন দুপুর রাত

এখন দুপুর রাত;- মোম একা জ্বলিতেছে টেবিলের ‘পরে
যেন তার আত্মা আছে- আমার এ-হৃদয়ের সহোদরা ব’লে মনে হয়
চক্ষুষ্মান প্রাণ মেলে এ-পৃথিবী গ্রহে ব’সে- আমার এ-ঘরের ভিতরে
যেন সে স্ফুরিছে ধীরে;- ঈশ্বরের পার্শ্বচরী হয়ে যেই সোনার সময়
একদিন দেখেছিল;- গোমেদ-হিরের মতো অমাংসল লোক-লোকান্তরে
এক দিন প্রাণ তার অনেক উজ্জ্বল শস্য করেছে সঞ্চয়
মনে হয় লুকায়ে রয়েছে যেন আমারই গৃহের মাঝে সেই সব গোপন ভাঁড়ার
যত ক্ষণ এই মোম জ্ব’লে যাবে অপরূপ শান্তি নিয়ে তার

অঘ্রানের এই রাতে খানিকটা গোপনীয় স্বাদ নিয়ে সুধীর হৃদয়ে দহে
গভীর ধীরতা আসে আরও যেন,- যেন রৌপ্য-গোধিকার মতো
কোনও এক জাদুঘরে ব’সে আছি- এখন নিবিড় রাত নহে?
হে হৃদয়, চারি-দিকে অনেক ধূসর বই কেন জড়ো করেছ বল ত’
কোনও এক সঙ্ঘারামে- অন্ধকারে- মুমুক্ষার বায়ু যদি বহে
অথবা নিভায়ে মোম বিছানায় শুয়ে যদি তুমি অবিরত
ঘুমাতে পারিতে এক গোধিকার কঙ্কালের প্রস্তরের মুখে
অনেক মাটির নিচে;- সুস্থির বেদনা কেন জাগাতেছ মলিন চিবুকে

দীর্ঘ এক কাচপাত্রে এইখানে কেউ দেবে খানিকটা জল?
কেউ নাই;- প্লেটো আর পতঞ্জলি হৃদয়ের সঙ্গিনী সমান
কিছু ক্ষণ রয়েছিল;- তাদের বিদায় দিয়ে মৃত এক নক্ষত্রের মতন নিশ্চল
পিপাসারে ঝেড়ে ফেলে অন্য কোনও ভিক্ষা আজ চাহিতেছে প্রাণ
তারা যেন বয়োবৃদ্ধদের দুই বনিতার মতন শীতল
স্থবির যেন (আজ রাতে)- সুপক্ক ভুট্টার খেতে বেছে নেয় স্থান
এই নক্ষত্রের রাতে যে-কোকিল- যেই পেঁচা- অথবা যে-মানবী স্বয়ং
তাহার প্রিয়ের চোখে, বলো মোম, কোন স্মৃতি আকাশের রং

এখন দুপুর-রাত;- মোম একা জ্বলিতেছে টেবিলের ‘পরে
চক্ষুষ্মান প্রাণ মেলে এ-পৃথিবী গ্রহে ব’সে- আমার এ-ঘরের ভিতরে…