এখন ভুলেছি সব

এখন ভুলেছি সব- ভাল আছি- বৈতরণী নদীটির পারে
আমরা রয়েছি ব’সে চুপে-চুপে সারি-সারি শকুনের মতো
অথবা নদীর পারে সহস্র-সহস্র মাইল ধ’রে অবিরত
চরিতেছি- কেন যেন; স্মৃতি নাই- চিন্তা নাই- শুধু অন্ধকারে
চরিতেছি; ভয় নাই- ব্যথা নাই- কিছু নাই- নদীর কিনারে
উড়িতেছি- উড়িতেছি; লক্ষ-লক্ষ কোটি-কোটি শকুন সে কত
ক্লান্তি নাই- ক্লান্তি নাই- বৈতরণী নদীর তরঙ্গ ক্রমাগত
শান্ত হয়; শকুনেরা জীবনের শেষ জ্বালা ঢেউয়ে-ঢেউয়ে ঝাড়ে

ঝেড়ে ফেলে; মরণ কি ভাল নয়?… আমরা হয়েছি কবে মৃত
আমরা এসেছি চ’লে শেষ দেশে- বোর্নিওর সমুদ্রের থেকে
মাঝিরা দেখেছে চেয়ে এক বার- সন্ধ্যার সোনালি পাম্-সারি
তাদের নিয়েছে ডেকে তার পর- এখনও হয় নি ব্যবহৃত
জীবনের সাধ আশা তাদের- মৃত্যুর মুখের ছবি দেখে
আলো গ্যাস ধোঁয়া কোলাহলে তারা চ’লে গেছে তাই তাড়াতাড়ি।



[পাণ্ডুলিপিতে এই কবিতার কোনো নাম না থাকায় সম্পাদক প্রথম লাইনকে শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তবে দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘জীবনান্দ রচনাবলী-১ (১৯৯৯)’ গ্রন্থে এই কবিতাটিকে ‘শকুন’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।]