গোধূলির সীমানায়

গোধূলির সীমানায়
এইখানে পর্বতের দেশে
মানুষ মেঘের মতো বিচরণ করে যদি
মানুষের অধিকার আছে
যে-মানুষ যৌবনের সীমা পার হয়ে
বুঝেছে দেহের স্থবিরতা
পুত্তলির থেকে উঠে আসিতেছে
প্রজাপতি-পাখার মতন

অনেক মাটির নিচে যেই সুর রয়ে গেছে
অনেক বিপ্লব, শান্তি, ভূতের বিস্ময়
দন্তীর অদম্য ভালোবাসা
সমুৎসুক সূর্যের আলোয়
অরণ্য-নদীর জলে
শৃঙ্গীর নিজের মুখ দেখা;-
এই সব উপেক্ষিত বিচ্ছুরণ
মুকুরের মতো মুখে রেখে
যেই সুর রয়ে গেছে পৃথিবীতে
তারা যেন অন্তরীণ সমুদ্রের মতো
আমার রুধিরে, রাগে, ধীমত্তায়
আমিও সে-সমুদ্রের পিতা ব’লে

আমায় উন্মুখ ক’রে রাখিতেছে
ওষধির প্রলেপ অনৃত
চির-দিন ঘুমাতে নিষেধ
আধাে-অন্ধ সন্দিহান মানুষের তরে
আমাদের এই আয়ুর্বেদ।
চেয়ে দেখ প্রকাণ্ড মাথার ক্রানিয়াম
মনে হয় মেরু’র সমুদ্রে লগ্ন
কিংবা ধৃষ্ট সাহারা’র বালির ভিতরে
হয়তো-বা আধাে-কৃষ্ট কে-বা জানে
তোমরা আয়ুর কাল আবিষ্কার করো, তাকে
জিনে নাও জীবনের আনন্দের মানে
কালো দস্তানার নিচে যদি হিরের আংটি থাকে
প্রেমিকার চাঁপা-আঙুলের
অথবা বীভৎস হাড়
শানিত চোখের সাধু ব্যবহার পেলে
ক্রমেই চেনায় অন্ধকার

আমার টেবিলে আমি
কয়েকটি বন্ধুকে ডেকে
কোনও এক জনহীন অরুন্তুদ শীতে
অথবা কংগ্রেস’এ গিয়ে
বিশ্রুত ভিড়ের সাথে মিশে
কলরব ক’রে, বক্তার মঞ্চের দিকে আমার পিঠের ব্রণ রেখে
অথবা বিদায় নিয়ে
যখন প্রবেশ করি সেই দেশে
যেইখানে মাটি, টিন, চীনেমাটি
মানুষের প্রাণের প্রতীক
রয়েছে বিচূর্ণ হয়ে
বেবিলন লন্ডনের স্থির প্রসিদ্ধির থেকে
ঢের দূরে- অন্ধকার নিমগ্ন ধারায়
তখন হয়তো সূর্য- লোকোত্তর
জ্বলিতেছে মধ্যম আকাশে
হয়তো বিখ্যাত চাঁদ
পিপুলের ডালের পিছনে
সংবাদিত ঘণ্টার মতন
পৃথিবীর বুরুজে- সমুদ্রে-
কিম্বা এরা কেউ নেই

আমার হৃদয়ে তবু অহঙ্কার জেগে ওঠে
কোনও এক নিদারুণ লোকশিক্ষাস্কুলে
আমার হৃদয় তবে ট’লে গেছে
আলাপী পাখিরা যায় অনন্য দুঃসাধ্য পথ ভুলে
কোনও এক মেরুসমুদ্রের দিকে
হয়তো সিলের ক্ষুধা, এস্কিমো’র ক্ষুধা
সেই সব পাখিদের চেয়েছিল
তবুও ডানার পিস্টন
কোনও এক বয়স্ক চিলের
এমন পার্বত্য দেশে গোধূলির কীর্ণ কুয়াশায়
মানুষের আত্মা পেয়ে ব’সে থাকে পাহাড়ের শিঙে
প্লেটো, প্লোটিনাস, পতঞ্জলি, শ্বেতাশ্বতর, মার্কস
সুখাদ্য মাংসের মতো খেয়ে!

মৃত্যুকে সে মানুষের
অবৈধ, অধীর
কারুকার্য ব’লে জানে
অনেক দুস্তর অবসাদে
মান্ধাতা-পুরানো ধমনীর।
যখন হরিণ মরে শিকারির গুলি খেয়ে
তখনও সে মৃত্যু নয়- যখন পতঙ্গ পড়ে আগুনের মুখে।
যাহাদের দার্শনিকি তবু মৃত্যু সৃষ্টি করে চির-দিন
তাহারা অজস্র মৃত সারসের মতো ভীম বৈতরণী তরঙ্গের দিকে চ’লে যায়
ঘুরে যায় অন্য সব প্রত্যাসন্ন মুমূর্ষুর আকাঙ্ক্ষায়
বিলোল বৃশ্চিক কর্কট সিংহ মীন।

জটিল, কঠিন, রুক্ষ স্বাদ চায়
আমার টেবিলে বন্ধু
আমার প্রান্তরে পাখি
আমার নগরে গ্রামে জীবনের ভিড়
সমুৎসুক ভীষণ সুন্দর
আমার আকাশে সূর্য
এই নিষেবণ দিয়ে আমি পৃথিবীকে
মেধাবী করিতে চাই
ধীরে-ধীরে দেহের পতন, ধমনীর শিথিলতা, রক্তের ক্ষয়
অবশেষে ফেলে দিয়ে যায় যেন
চূর্ণ এক গোমেদের মতো
অদ্ভুত মানবদেহ করেছিল যে-সব মনন-সমন্বয়।