গন্তব্যের অবিচল অকৃতিমতায়

যখন দুপুরবেলা আঞ্জিরের পাতার আড়ালে
দু’-চারটে টিকটিকি নিজ মনে সময় পোহায়
মনে হল পুনরায় আমি এক বিদেশে এসেছি
গন্তব্যের অবিচল অকৃত্রিমতায়
যেমন অনেক বার- তেমনই এখনও
মনে হল এখানে রয়েছে সবই ঠিক
পৃথিবীর সকল দেশের মাঝে এই দেশ শুধু
আমার কাজের তরে সব-চেয়ে বেশি সাময়িক
সন্ধ্যায় হংসীর পিছে সমস্ত নদীর
এক দিন মনে হয়েছিল আমি চলেছি একাকী
হয়তো দ্বিতীয় হংস অথবা শেয়াল
অত্যন্ত বিভোর হয়ে নিয়ে গেছে পাখি
সূর্য বানাবার প্রয়োজন
তবুও যতই দেশ ঘুরে যায় রাত্রির পথে
পুনরায় সকালের ঘুমে লাল সাদা লাল সেতুর উপরে রোল শুনি
কাছেই সে আছে ব’লে মনে হয় ভোর যুগ জনরব জানে
ধোঁয়ার রঙের মতো হাড়ের চিরুনি
জানালার শান্ত স্বচ্ছ ছায়াচ্ছন্ন শাটারের ও-পারে প’ড়ে আছে
এখুনি তো দু’-এক জন রমণীর হাতে
চুপচাপ কাজ ক’রে কয়েকটি সরু-সরু চুল
মেঝের উপরে প’ড়ে আছে- তুলে নেবে দাঁতে।
ক্লান্ত রমণীকে প্রতারিত ক’রে গেছে সকলের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে
তবু কেন আজ এই প্রকৃতির বসন্তের ভোরে
মুখ টিপে হেসে জড়ায়েছে
জড়ায়ে রেখেছে তার

তবুও কোথায় কোন রতি টেবিল-ম্যান্টলপিস মেঝের কব্জায় হাড়
প্রকৃতির নগরীর চিরুনির কাছে থেমে র’ব
আকাশ ক্রমশ বড়ো, জীবনকে সে অবসর দেয়
চাঁদের পালকটিকে প্রায় গ্লানি-তিরোহিত করে
অকস্মাৎ চেয়ে দেখে সমতার মতো দূরে ছোট-বড়ো পাহাড় রয়েছে
সেখানে নিসর্গ নিজে অকপট ব’লে
দ্বিতীয় নারীর মতো সে কি জ্বলে নেভে বিকেলবেলায়?
আকাশে হাঁসের দল উড়ে এলে অদ্ভুত মুখোশ
খুলে নেবে সেই নারী- এত দিন পরে
নিজের নির্ধূম ভুল আউড়িয়ে নিয়ে সোজাসুজি?
আকাশ নীলাভ হয়ে সাবধানী শব্দটিকে রাখে আকাশের প্রাণে?

এখন এ-বিদেশের পরিষ্কার দিনের বেলায়
সারি-সারি উঁচু-নিচু পাহাড়ের কর্কশ সুন্দর সফলতা
তবু তিন-চার মাইল চ’লে গেলে তেমনই সফল
পরমাইয়ে চির-দিব্য-মতো- এক মুখে নেই দুই কথা।
তবুও কী ক’রে যুগ খোয়া যেত সেই নারীটিকে কোথায় পাওয়া যাবে?
সুন্দর হরিণও দেখে হয়ে যাই ভীত
যখন স্বপ্নের মতো অবাস্তব সব
সহজ সত্যের মতো তবুও হতেছে প্রকাশিত।
প্রাণ নেই, অভিজ্ঞতা ছড়ায়ে রয়েছে
কোনওখানে কথাচ্ছলে কৃষ্ণা নবমীর আলো পলাশে-পলাশে
তবু তার চাঁদ মনে ধরা প’ড়ে গেছে
ভোরের সমস্ত রোদে মাটির নিকটে কোথায়
চেনা বা অচেনা এক রমণীর কথা ক’টি কেড়ে।