গুর্জর-শিল্পী

সে এক গুর্জর-শিল্পী জন্মেছিল ভারতের কোনও এক দেশে
বোম্বাইয়ের সমুদ্রের থেকে কিছু দূরে
খানিকটা অন্তহীন ভূখণ্ডের ব্যাপ্তির ভিতরে
সেইখানে ভোরবেলা মাঠের ঘোড়ার দিকে চেয়ে থেকে তবু
সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়- যেন সর্বদাই হ্রস্ব বামন
ধূসর গাধার পিঠে চ’ড়ে গ্রাম্য তামাশায় দীপ্ত হয়ে আছে
সেখানে দুপুরবেলা সবুজ সমুদ্র থেকে হাওয়া
ভেসে এসে পৃথিবীর পরথুপি ঘাসের কিনারা
কেটে দিয়ে যেত যেন কাঁচির কোমল আলোড়নে
প্রতিটি ঘাসের মুণ্ড জেগে উঠে করতালি দিয়ে
বাতাসের যন্ত্রে চ’ড়ে চ’লে যেত মুমুক্ষার দিকে
কাস্তে-হাতে মালি এসে পরিপাটি সবুজ প্রান্তর
দু’ চোখে লেহন ক’রে ব্রহ্মা’র নিপুণ প্রবৃত্তিকে
আশীর্বাদ ক’রে চুপে বায়ুর ভিতরে
মসৃণ সুড়ঙ্গ খুঁড়ে অন্তর্হিত হত
সৌম্য নেউলের মতো- সমস্ত বিকেল ভ’রে সিন্ধুর বাতাস
তবুও সুসীম শব্দে ন’ড়ে যেত এমন কৌশলে
যাতে সেই ভাস্করের মনে হত হয়তো-বা ফোর্ড
প্রত্যেক মুহূর্তে পূর্ণ প্লেন গড়ে- মারুতি’র মতো
আয়ু পেয়ে- পুনরায় প্লেন গ’ড়ে- নিমেষে-নিমেষে
মানুষের প্রতীক সে- সর্বদাই আমাদের শুভ সময়ের
বিষয় সে; বিষয়ের ভিতরে রূপক।
সিন্ধুর মতন শব্দে বুদবুদিত হয়ে উঠে পল-অনুপলে
এত দূর ভেসে এসে তবুও সে রূপকের ভিতরে বিষয়
খেয়ে যায়। তাই সেই শিল্পী ঢের কথা ভেবে বহু দিন
অবশেষে অন্নের অভাবে আরও বহু দিন- ধনীর হুকুমে
তাহার প্রাসাদে দেয়ালে কিছু ছবি
এঁকে দিতে গেল- একা- একটি জোনাকি-ছবি ক্রমে
ব্যক্ত হয়ে এল নিজ প্রয়োজনে মার্জারীর মতো।
অভিভাবিকার মতো আড়ম্বরে- হুবহু বিড়াল-মুখ নিয়ে
ভয়াবহ শঠ তুলিকার থেকে- ঈষৎ বাতাসে যেন লেজ
ন’ড়ে ওঠে- বিড়ালের নীল চোখ যেন সেই সওদাগরের
টেবিলে মাছের ডিশে চেয়ে থাকে এমন অকুতোভয় প্রেমে
যাতে সেই সমুদ্রের নোনা মাছ ধীরে
নিজের দেহের স্বাদ অনুভব ক’রে হিম মৃত্যুর থেকে
জেগে উঠে অন্তর্হিত হয়ে যায় বায়ুর ভিতরে
বিস্ময়ে বিবর্ণ হয়ে কেউ
হয়তো-বা কেউ ব’লে মার্জারী’র মুখের খোঁড়লে
ঢুকে গেছে। সকলেই করতালি দিয়ে হেসে সারা-রাত হলুদ মদিরা
খেয়ে যায়। এমন অপূর্ব গল্প কোনও দিন কেউ শুনেছিল!
সেই দেশে কালো, সাদা, সাদাকালো, পাটকিলে, কপিশ রঙের
অনেক বিড়াল ছিল- সোনালি বিড়াল তবু কোনও দিন পৃথিবীতে কেউ
দেখে নাই- সোনালি বিড়াল এই পৃথিবীতে নেই।
ছবির গভীর সোনা ভালো লেগে গেল সেই যুবাদের চোখে
কিংবা সেই মার্জারী’র আয়ত প্রতিভা যেন ভোরের বেলায়
পৃথিবীকে অর্থ দেয়- রাতের মোমের অবমর্ষে রোজ
বিল্লি’র মুখের রূপ প্রতিজ্ঞাপাশের থেকে ঢের
সঙ্কল্পের মনে হয়- অনেক অভূতপূর্ব মাছের শরীর
টেবিলে নিজের থেকে চ’লে আসে- ফেঁসে যায়
টেবিলে গোরু’র-দুধ সফেন গেলাস থেকে উত্তেজিত হয়ে
হয়তো-বা মানুষের পেটে গেল- হয়তো বিড়াল
দেয়ালে ছবির থেকে খেয়ে গেছে- ছবি যদি পারে
যুবারা উৎফুল্ল হয়ে ব’লে গেল পৃথিবীর রূপের প্রতীক
এখন বিষয় চায়- হয়তো-বা বিষয়ের বিমর্ষ স্থূলতা
এখন রূপক চায়- কোথায় বৃত্তের শুরু, হে সায়ন
কোথায় বৃত্তের শেষ ক্লান্ত- ক্লান্ত- ক্লান্ত নাগার্জুন?
লম্বা এক সাদা হাত- হয়তো নারীর
টেবিলে ছড়ায়ে ছিল অতিকায় কৃমির মতন
হাত তুলে নিয়ে নারী ব’লে গেল প্রতি যুবকের
চোখের বিবরে বেগে এক-আধ ইঞ্চি পথ ঢুকে
মুখের বিবরে যেন অনন্ত যোজন পথ ঢুকে
আমার থালায় এই পায়রাচাঁদাকে
কে দিয়েছে? কী ক’রে চাঁদা’র থেকে কাঁটা
বার হল? কোথায় গিয়েছে চ’লে আমাদের নাড়িনক্ষত্রকে
ফাঁকি দিয়ে? প্রত্যহ রাতের গল্প এই সব খাবার-টেবিলে
সবুজ সমুদ্র শোনে দূর থেকে পিচ্ছিল জলের
রগড়ে আসক্ত হয়ে দুম্বা ভেড়া’র মতো হেসে
যুবকেরা দার্শনিক হয়ে গেলে নারী
নিরেট ঘটনাস্রোতে তাহাদের এনে
কুঁড়েমির জন্ম দেয়- ঘুম আসে- সকলে ঘুমায়।
তবু এক দিন ভোরে সকলেই এসে দেখে গেল
সোনালি রঙের প্রায় এক ঝাঁক বিড়ালের শিশু
কার্পেটের ধুলো ঝেড়ে খেলা করে বলের মতন
খেলা করে- ঠোঁটের উপরে হাত রেখে দিয়ে সকলেই আতুর বিস্ময়ে
কথা অনুভব ক’রে গেল অবিকল
কিন্তু এই সোনালি মার্জারী
কোন পুরুষের প্রেমে পড়েছিল- দেয়ালের ফ্রেস্কো’তে- এ-সব শাবক
জন্মেছিল কী রকম পিতার ঔরসে?
একটি বিড়াল এঁকে অনন্ত সময় নষ্ট ক’রে
কোথায় গিয়েছে শিল্পী?- ঘড়ির স্পন্দনে যুক্ত হয়ে
যখন কেবলই সিন্ধু শব্দ করে- পুনরায় শব্দ করে তবু
কেবলই মোটর, প্লেন, এরোপ্লেনের জন্ম দিয়ে যায় ফোর্ড।