হে কৃষকবালিকা

ঐ যে দূরে ঐ শহর দেখা যায়
কত মিনার- কত প্রাসাদ- স্টেডিয়াম- এরোড্রোম
ওর কী নাম?
হেমন্তের রৌদ্রে কৃষকবালিকাকে জিজ্ঞেস করলাম;
কটা মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে
এক ঝলক রূপ ও হাসি ছুঁড়ে বললে- দেহলি!

অবাক হয়ে ভাবলাম কোনও কবি কি দিল্লিনামা লিখেছিল
কিন্তু হে বালিকা, সেই সব গভীর কীর্তির কথা শুনতে চাই না
এই জ্যামিতিহীন প্রান্তরের কী নাম যেখানে তুমি দাঁড়িয়ে রয়েছ
তোমাদের দেশের নদীর কী নাম?
শত-শত সোনালি চিলে মুখর ঐ আকাশের রং কোন ফুলের মতো
এই অঘ্রানের রৌদ্রের স্বাদ কি এই বাদামি মাটির মতো নয়?
তুমি ঢের দূরে- তুমি ঢের নিকটে তবু
ঐ দিল্লিভূমির কোনও পিতামাতা
কোনও মহান দানব-ইতিহাস তোমাকে গ্রাস ক’রে উদগীর্ণ করে নি
এই বিস্তীর্ণ রৌদ্রে মৃত্তিকার ভিতর থেকে গোধূম-আহ্লাদের মতো উঠে এসেছ তুমি
(শস্যের শিষে গিরেবাজ-পাখির সাদা আনন্দের মতো)

দিল্লি- ফিরদৌসি- কবিতা- সভ্যতা-
তৈমুরলঙ্গ- আত্তিলা- মুসোলিনি- হিটলার-
আরও মহান ইতিহাস তৈরি করবে।
কিন্তু আমি শুধু গোধূলির খেতে ব’সে
রৌদ্র- নীলিমা- পাখি- ও অনাদি মানবীকে নিয়ে
জাপানের এরোপ্লেনে নষ্ট হয়ে যাব না হয়তো কাল।

যদি গুঁড়ো হয়ে যাই
তবুও আমাদের ভস্মের ভিতর থেকে কোনও নবীন প্রতিভা- বিজ্ঞান-
প্রগতির জন্ম হবে না আর
শুধু উত্থিত হবে বাদামি মৃত্তিকা- গোধূমের খেত- অঘ্রানের রোদ
প্রেমিক মানব- অনাদি মানবী
(হে কৃষকবালিকা, ঐ দেখো এরোপ্লেন উড়ে চলেছে
রাজপুতানা’র থেকে হয়তো বোম্বাইয়ের দিকে?
এই উজ্জ্বল রৌদ্রের নীলিমায় তাকে পুরুষচিল ব’লে মনে হয়
যেন চিল-রূপসির সন্ধানে চলেছে)

আমি জানি রূপের স্বপ্নের সত্য
অনেক অঙ্গার কঙ্কাল ও আগুনের নদীর ও-পারে
আবার গোধূম হয়ে জেগে উঠবে
আমরা মুখোমুখি এসে দাঁড়াব (আবার)

আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিতে আমি অনেক দিন কাটিয়েছি, হে কৃষকরানি,
রোম-ব্রিটিশের সাম্রাজ্যের ভাঙাগড়ায় অনেক দিন কর্মীর কাজ ক’রে এসেছি
জার্মানির ক্ষোভ ক্ষুব্ধ হয়ে অনুভব করেছি
জাপানের ক্ষুধা ক্ষুধিত হয়ে বোধ করেছি
ভারতের চীনের কুলি মজুর হয়ে ক্যান্টিনে- ফুটপাথে-
হলুদ নদীর তীরে
অনেক বার লাশ হয়ে গেছি
কিন্তু তবুও মনে হয় পৃথিবীকে ফিরে গড়বার অনুভবে আমাদের হাতে
চারি-দিকে সমুদ্রের মতো প্রেম বিলিয়ে
তোমার জন্য সমুদ্রের মতো প্রেম রয়েছে ব’লে, হে কৃষকবালিকা।