হে হৃদয়

হে হৃদয়,
নিস্তব্ধতা?
চারি-দিকে মৃত সব অরণ্যেরা বুঝি?
মাথার ওপরে চাঁদ
চলছে কেবলই মেঘ কেটে পথ খুঁজে-

পেঁচার পাখায়
জোনাকির গায়ে
ঘাসের ওপরে কী যে শিশিরের মতো ধূসরতা
দীপ্ত হয় না কিছু?
ধ্বনিও হয় না আর?

হলুদ দু’ ঠ্যাং তুলে নেচে রোগা শালিখের মতো যেন কথা
ব’লে চলে তবুও জীবন:
বয়স তোমার কত? চল্লিশ বছর হ’ল?
প্রণয়ের পালা ঢের এল গেল-
হ’ল না মিলন?

পর্বতের পথে-পথে রৌদ্রে রক্তে অক্লান্ত সফরে
খচ্চরের পিঠে কারা চড়ে?
পতঞ্জলি এসে ব’লে দেবে
প্রভেদ কী যারা শুধু ব’সে থেকে ব্যথা পায় মৃত্যুর গহ্বরে
মুখে রক্ত তুলে যারা খচ্চরের পিঠ থেকে প’ড়ে যায়?

মৃত সব অরণ্যেরা;
আমার এ-জীবনের মৃত অরণ্যেরা বুঝি বলে:
কেন যাও পৃথিবীর রৌদ্র কোলাহলে
নিখিল বিষের ভোক্তা নীলকণ্ঠ আকাশের নীচে
কেন চ’লে যেতে চাও মিছে;
কোথাও পাবে না কিছু;
মৃত্যুই অনন্ত শান্তি হয়ে
অন্তহীন অন্ধকারে আছে
লীন সব অরণ্যের কাছে।

আমি তবু বলি:
এখনও যে ক’টা দিন বেঁচে আছি সূর্যে-সূর্যে চলি,
দেখা যাক পৃথিবীর ঘাস
সৃষ্টির বিষের বিন্দু আর
নিষ্পেষিত মনুষ্যতার
আধারের থেকে আনে কী ক’রে যে মহানীলাকাশ,
ভাবা যাক- ভাবা যাক-
ইতিহাস খুঁড়লেই রাশি-রাশি দুঃখের খনি
ভেদ ক’রে শোনা যায় শুশ্রূষার মতো শত-শত
শত জলঝর্নার ধ্বনি।

ময়ুখ। কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১৩৬১