হঠাৎ তোমার সাথে

হঠাৎ তোমার সাথে কলকাতাতে সে এক সন্ধ্যায়
ঊনিশশো চুয়াল্লিশে দেখা হ’ল- কত লোক যায়
ট্রাম বাস ট্যাক্সি মোটর জিপ হেঁকে
যাদের হৃদয়ে বেশি কথা হাতে কাজ কম- তাদের অনেকে
পায়ে হেঁটে চ’লে যায়-
কেবলই ক্লান্তিতে ধুঁকে আমাদের মুখে ঠোঁটে তবু যেই হাসি
ফুটে ওঠে স্বপ্নকে খণ্ডন ক’রে বিষয়প্রত্যাশী
অমূল্য সংসারী সে-ই- বাজারে বন্দরে ঘোরে, মাপজোক ক’রে
হিসেবের খতিয়ানে লাভ হ’লে রক্তের ভিতরে
তৃপ্তি পায়- লোকসান হ’য়ে গেলে অন্ধকারে নিগৃহীত মনে
অনুভব করে কোনও মনিবের সংকীর্ণ বেতনে
ভৃত্যের শরীর তার-। ভৃত্যের শরীরে তার মন
নারী আর নক্ষত্রের তবু মহাজন?

তুমি এলে- সময়ের ঢের আয়ু শেষ ক’রে তবে
এখনও প্রদীপ জ্বলে এ-রকম স্থির অনুভবে
তোমার শরীর আজও সুশ্রী নম্র- তবুও হৃদয়
সেই স্নিগ্ধ শরীরের সতীনের মতো কাঁটা নয়?
দুরু দুরু হৃদয়ের বিস্ময়ে ব্যথায় এ কথা যদি ভাবি
তবু সে ব্যথার চেয়ে আরেক শক্তির বেশি দাবি
সেই স্বাদ তুমি- আমাদের চোখে এসেছিলে ব’লে
পৃথিবীকে ভালো ক’রে পাই আমি- এ পৃথিবী অন্তর্হিত হ’লে
সত্যই সূর্যের আলো- তবুও সূর্যের চেয়ে সুখী
তোমার গভীরভাবে ভালো শরীরের মুখোমুখি
আমার শরীর-মন- ঈশ্বরের অনুরোধে কখনও সময়
গতি কি থামায় তার- লীন হ’লে অনুসৃত হয়?
তুমি তাকে থামায়েছ- সৃষ্টির অন্তিম হিতাহিত
ভুলে আজ কলকাতার শীত-রাতে কবের অতীত
বহমান সময়কে অন্ধকারে চোখঠার দিয়ে
নারীর শরীর নিয়ে রয়েছ দাঁড়িয়ে।
তোমার উরুর চাপে সময় পায়ের নিচে প’ড়ে
থেমে আছে ব’লে মৃত তারিখকে আবিষ্কার ক’রে
ভালোবাসা বেঁচে উঠে, আহা, এক মুহূর্তের শেষে
তবুও কি ম’রে যাবে পুনরায় সময়ের গতি ভালোবেসে?

অতীত তো সুজাতার শিশু; নারি, মনীষীহৃদয়
সে শিশুকে বাঁচাবার জন্য ব্যস্ত নয়।

হে সময়, এক দিন তোমার গহীন ব্যবহারে
যা হয়েছে মুছে গেছে, পুনরায় তাকে
ফিরিয়ে দেবার কোনও দাবি নিয়ে যদি
নারীর পায়ের চিহ্নে চ’লে গিয়ে তোমার সে অন্তিম অবধি
তোমাকে বিরক্ত করে কেউ
সব মৃত ক্লান্ত ব্যস্ত নক্ষত্রের চেয়েও অধিক
অধীরতা ক্ষমতায় ব্রহ্মাণ্ড শিল্পের শেষ দিক
এই মহিলার মতো নারীচোখে যদি কেউ খুঁজে ফেরে, তবে
সেই অর্থ আমাদের এই মুহূর্তের মতো হবে।

প্রতিক্ষণ । মাঘ ১৩৯০