হঠাৎ কখন যেন

হঠাৎ কখন যেন মনে হয়-
ট্রাম- বাস- নিঃশব্দ নদীর জলে হাঁসের মতন
রাজহাঁস- দ্রুত- ক্ষিপ্র- আঁধার নদীর জলে কোন এক দূর পাড়াগাঁ’র

এরা সব ম’রে যায়
পথ থেকে মুছে যায়
পৌষের রাত আরও শীত আনে- অন্ধকার আনে- বিজনতা নিয়ে আসে
সকল গ্যাসের আলো জোনাকির শরীরের মতো
মৃদু শীত মোলায়েম মধুর

যখন এ-পৃথিবীতে জোনাকিরা থাকবে না
তাহাদের ধ্বনি হয়ে এরা যেন রয়ে যাবে
তাহাদের ইচ্ছা হয়ে- তাহাদের অন্বেষণ হয়ে
গভীর শীতের রাতে যখন এ-শহরের নীরবতা আড়ষ্ট অসাড়
নগ্ন ঝিঁঝি ডিম শামুকের একখানা মাঠের মতন
পাড়াগাঁ’র
শহরের এই নিস্তব্ধতা
আমারে ঘুমাতে দেয় না ক’
কোনও ভাবে অতীতে যে ফিরে যাব: পারি না ক’
যেই প্রেমে যেই স্বপ্নে
যেই সব শীতরাত ভোররাত কুয়াশায় ঝাউগাছ
পেঁচা হিম গুগলি শিমলতা
গ্রীষ্ম আর বসন্তের ডালপালা পাতা চুলে আঁচলের পিছে
হাওয়া, পিছে চাঁদ: পিছে
নক্ষত্রেরা… রোদ… শিমুলের লাল ফুল
সেই সব মৃত নিয়ে শহরের বাহিরের কী এক পৃথিবী
স্থগিত অতীত হয়ে গেছে
তোমাদের জীবনের কাছে
আমার এ-জীবনের কাছে
গভীর শীতের রাতে আমি তার ব্যথা পাই
ঘুম ভেঙে যায়
শহরের জানালার ফাঁক দিয়ে চেয়ে থাকি
শীতরাত… শেষরাত
অক্লান্ত ছ্যাকড়া তবু- ঘোড়ার সহিসের গাড়ি- মোটর- মোটর
নিঃশব্দ নদীর জলে- হাঁসের মতন যেন:
রাজহাঁস- দ্রুত- ক্ষিপ্র- আঁধার নদীর জলে- কোন এক দূর পাড়াগাঁ’র
আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলো সাপের মতন যেন কোন্ এক দূর পাড়াগাঁ’র
বিন্দু-বিন্দু আলোগুলো গ্যাসের? না জোনাকির?
জোনাকির- জোনাকির; কোনও এক দূর পাড়াগাঁ’র

মৃদু হিম- মধুর পৃথিবী
স্বপ্নের ভিতরে সব ডুবে যায়
প্রেমের ভিতরে
ঘুমের ভিতরে
ব্যথার ভিতরে তবু
ব্যথার ভিতরে
কোন এক অতীতে আমি ফিরে যেতে পারি না ক’ আর
প্রেম নাই- স্বপ্ন নাই
এই নিয়ে শহরের অগ্রসর
শতাব্দীর অগ্রসর
এই নিয়ে মানুষেরা নক্ষত্রের মতো হবে, হতে পারে
পৃথিবীরই ভেতরে তবু কোথাও পৃথিবী আছে এক
শামুক গুগলি নদী শীতরাত নরম রোমের মতো সব আঁচলের সুতোগুলো, পালকের মতো
ঘাস- ধুলো- মাটি- ঘাস- ঘ্রাণ- ইচ্ছা- মাছরাঙা- সূর্যমুখী- মেয়ে-
সব-চেয়ে শেষ এক নক্ষত্রেও এর চেয়ে বেশি কেউ পাবে কেন?
এই কি সকল নয়: এইটুকু?

অনেক নক্ষত্র খুঁজে মানুষ এ-সব পাবে
আজ নয়।