হয়তো কার্তিকে

হয়তো কার্তিকে আমি চ’লে যাব- লেবুর হলুদ পাতা হয়তো তখন চোখে পড়ে
তখন কাঁকুড়লতা কুঁড়ি ধরে- কুঁড়ি ধরে- হয়তো ফোটে না কোনও ফুল
চিলের ডানার থেকে একটা কী আধটা পালক বুঝি ঝরে
সবুজ ঘাসের ‘পরে কুয়াশায় লেগে থাকে তাহাদের সোনালি আঙুল

হয়তো পউষরাতে পৃথিবীর পথ থেকে চ’লে যাব আমি কোনও পথে
এক ভিড় লোক এসে আমারে নামাবে চুপে উঠানের ঘাসে
তাদেরই দু’-এক জন হয়তো-বা সে-রাতের নক্ষত্রের আড়ষ্ট জগতে
দেখিবে ধূসর ছায়া কিছু ক্ষণ ফুটে আছে করুণার মতন আভাসে

তার পর গেছে নিভে… হয়তো-বা ফাল্গুনের ভোরে আমি পৃথিবীর থেকে
আমার বিদায় নেব: হয়তো মাথার ‘পরে রাঙা রোদে দু’-একটা বক
উড়ে যাবে;- উষ্ণ পালকের গন্ধে গাংশালিখেরা যাবে পৃথিবীরে মেখে
যেই জাম বহু দিন মরেছিল ভাবিয়াছি, হয়তো ফুটিবে তার নতুন কোরক

চ’লে যাব কোনও দূর দিগন্তরে হয়তো-বা বৈশাখের দু’-পহরে আমি
আকাশের বুক থেকে দিঘির করুণ জলে তখন নেমেছে শঙ্খচিল
আমের ছায়ায় নিচে ডানা ধোয়- রোদে-চটা ক্লান্ত ডানা: কোমল, বাদামি
আরও জলে নরম সবুজ জলে ব’সে থাকে বহু ক্ষণ আতুর- শিথিল-

হয়তো-বা চ’লে যাব অন্ধকারে শ্রাবণের বৃষ্টি নিয়ে চোখের উপরে
কী ক’রে সাজাবে চিতা- কী ক’রে যে কী-বা হবে- এই ভেবে অবসন্ন ভিড়
হয়তো বিমূঢ় হয়ে প’ড়ে র’বে; বহু দিন কাটায়েছি আমি যেই ঘরে
সেইখানে দেখা যাবে বৃষ্টি-ভেজা ক্লান্ত এক চড়াইয়ের নরম শরীর

অন্ধকারে কাঁপিতেছে… এ-বাদলে পৃথিবীর পারে আর পায় না ক’ দিশা
জানালার ফাঁক দিয়ে কখন ঢুকেছে তাই আলোহীন ছন্দহীন ঘরে
কাল ভোরে তবুও অনেক আলো এসে যাবে- বারান্দায় ধান ও সরিষা
শুকুতে রাখিয়া যাবে তারা সব: খাবে তুমি, গান গা’বে রোদের ভিতরে।