যেইখানে বৎসরেরা

যেইখানে বৎসরেরা গিয়েছে বিবর্ণ ক’রে চায়ের পেয়ালা, গ্লাস
মাঠ, খেত, মানবীর মুখ, মানুষের স্মৃতি-
সময় যেখানে তার গলিত কুষ্ঠের ক্ষত: অঙ্গহীন- বক্রাকার- তবু রাখে না ক’-
সেইখানে আমি এক শালিখের মতো চ’লে যাব এক দিন-
দুই ধারে ঘাস তার- ঢের ঘাস- চাঁদাকাঁটা- বঁইচি’র ঝোপ- হোগলা’র খেত
তার মাঝে খানিকটা (পরি’র ঝুলির ভিতরে যেন) কাকচক্ষু জল
দু’ দিকের সমান্তরাল চাপে উৎসরিছে
হয়তো-বা চ’লে গেছে সমুদ্রের দিকে
দুই ধনু দূরে প’ড়ে আছে সিকি-মাইল পোড়ো জমি
মনে হয় ধূসর মেঘের নিচে দুপুরের রৌদ্রে যেন (শুয়ে আছে) মিশরের মমি
শুয়ে আছে; (সেইখানে মুসুরি’র খেত কেউ বুনিত আবার যদি এসে)
(সবুজ মুসুরি-খেত সেখানে বুনিবে যেন পৃথিবী আবার)
(সেই শান্তি যখন সে আবার করিবে আবিষ্কার)
একটা কাঠের টুল নিয়ে যদি এইখানে বস তুমি
এক জোড়া পাশাপাশি ছাতিমের ছায়ার ভিতরে
মনে হয় হাজার-হাজার কাল ব্যবহৃত
যেন কোনও সম্রাজ্ঞীর সাটিনের ঘ্রাণ
শুক্ল মৃদু অনুরোধ জানাতেছে
মৃত্তিকার থেকে; (ঘাসের ভিতর থেকে)
অদূরে একটা সাঁকো ঘাস আর ছাগলের বিচরণে
সময়ের হাতে আজ রোমাঞ্চিত
তার নিচে জলের ঝাপসা রং- ছায়া- শান্তি; খানিকটা আগাছার ভিড়
সেখানে থাকিত যদি তবু এক ডাহুকি’র নীড়
দু’-একটা মূর্খ কৃষকের
তাড়া খেয়ে উড়ে গেছে-

ইঁদুরেরা ঝাঁপায়ে সেখানে জল পার হয়
মনে হয় কোনও এক সমুদ্রের
পচা জাহাজের থেকে যেন ভয় পেয়ে অন্ধকারে তারা
লাঠি-হাতে চীনপরিব্রাজকের মতো
জীবনের মরুভূমি পার হয়ে চলিতেছে

এইখানে কয়েকটা উঁচু-উঁচু গাছ
আজিকার প্রশ্ন- রক্ত- মৃত্যু- শব স্থির চোখে যথাস্থানে রেখে এমন সবুজ- দীর্ঘ-
মানুষের হৃদয়ের প্রিয় অভিভাবকের মতো হতে হলে
কোন খাদ্য খেতে হয়? কোন খাদ্য খেতে হয়
(যেন কোনও বড় গাঢ় সুনির্জন স্বপনের নিমন্ত্রণাগার
ইহাদের ঘিরে আছে
আমার মতন এক চিন্তান্বিত- প্রকৃতির গুপ্তচরকেও ভালোবাসে)

যখন বালক আমি ছিলাম এ-পৃথিবীতে
যখন ছিলাম যুবা শুধায়েছি- অনুভব করিয়াছি এই সব;
অথবা যখন আমি সময়ের শীতে নুয়ে র’ব
ডিনারটেবিল পেতে এই সব তরুদের ভিড়ে
দুপুরের নির্জন সমীরে
রজনীর যেন হুমাপাখিদের স্তব্ধতার নিচে
এইখানে ব’সে র’ব।