যদিও আজ তোমার চোখে

যদিও আজ তোমার চোখে আমি ছাড়া অন্যরা বিখ্যাত
মনে পড়ে অনেক আগে এমন ছিল না তো!
মাঠে ঘরে সম্মেলনের থেকে ফিরে
তখন তুমি সহজ স্বাভাবিকের মতন ছিলে,
আমিও তখন তোমাকে ছেড়ে সমাজ পৃথিবীর
অসঙ্গতির করুণ ক্লান্ত ভাষা
শুনি নি এমন। গভীর অন্তরঙ্গ আঘাত ক’রে-
চূর্ণ ক’রে ফেলতে পারে তোমার আমার মতন ভালোবাসা।

দিনে তোমার সঙ্গে নিয়ে নদী নগর প্রাকসামরিক রাষ্ট্রে পৃথিবীতে
হৃদয় ভ’রে কিছু নিতে, কিছু দিয়ে দিতে
ব্যস্ত থেকে ভুলে যেতাম বীজাণু রোগ মৃত্যু মলিনতা
ক্লান্তি বিয়োগ ছিল, তবু সে সব নিছক মাংসপেশীর ব্যথা
সুস্থিরতার কাল চলেছে তখনের প্রায় ভারতে ইউরোপে
প্রথম মহাযুদ্ধ সবে শুরু তখন, কানে খানিক জল
ঢুকে গেলেও পূর্বাচার্যেরা সব ঝেড়ে
ব্যাঙ্কে ধর্মে যৌন সম্মিলনে সূর্যে আশ্চর্য সফল।

দিনের বেলা ফ্যাক্টরি ডক বস্তি ফাঁড়ি আজিকাজি ডাঙার ভিতর দিয়ে
ঢাকনি খুলে ঘুরে বেড়ায় সে সব পথে তোমার কাছে গিয়ে
পরিহাসের রসিকতায় উৎসারিত হয়ে
সৈন্য, নটী, দালাল, ভাঁড়, ব্রাত্য, সার্থবাহের ঘরে
সচ্ছলতা আশা আপোষ কাড়াকাড়ি বিলাস ব্যর্থতায়
দেখেছিলাম কল্কী ও তার ঘোড়া রগড় করে।

আঁধার সভা স্বদেশী মেলা ঢের জানালার হৃদয়বিদারক
অন্ধকারে চেয়ে থেকে পূর্ণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ছক
হৃদয়ে এল ধীরে- ক্রমে- বিষণ্নতার স্থির প্রতীকের মতো।
ইতিহাসের নিয়ম কঠিন, তবুও ফোটায় করুণাবশত
অপার আশার আকাশকুসুম; লোকায়ত সফলতায় প্রবেশ ক’রে নিতে
দেরি করে; মানুষেরাও ক্লান্তিবিহীন প্রাণের প্রকাশ দেখিয়ে দিতে জানে
বলে: তখন লোহা পাথর ছিল, এখন অনুর বিদারণে
পথে এল, আলো পেল মানবতার মানে।

এখনও সে তেমন হতে পারে নি কিছু তবু
ভেবেছিলাম মানুষ ইতিহাসের হাতে ক্রমেই বড়ো হবে
মেশিনকে বশ করে খেলার চেয়ে
হয়ে পড়ে অন্য সফলতায় প্রবীণ;- তবুও মানুষ খেয়ে
মেশিন ক্রমেই আজ পৃথিবীর একক শক্তি হ’ল
প্রেমের ছেদ হয়ে তার নিউক্লিয়ার বোমীয় ক্ষমতা
বেড়েই গেল- জ্ঞানের পরিণামের মানে হ’ল
এই ধরনের পৃথক করার কথা?

এখনও ঢের আলোয় পথিক রয়েছে তবু জানি
অনেক অমর অর্ধসত্যে অবিশ্রান্ত রাজকীয় চালানি
চলছে আজও স্পষ্ট শতাব্দীকে স্পষ্ট অর্থে দাঁড় করাতে গিয়ে
দেখেছি সে কাজ প্রমথদের; চারি-দিকের অন্ধকারের ভিতরে দাঁড়িয়ে
তবুও দেশ সময় ও সমাজ বাস্তবতা
অনেক দূরের থেকে করুণ সুরের মতো ক্রমে ক্রমে বজ্রশব্দে এসে
আজকে যুগের গণনাহীন ব্যক্তি জাতি অর্থ প্রয়াস রীতির স্তম্ভ ভেঙে
মৃত্যু সে কি, গভীরতর (সফলকাম) সত্য ভালোবেসে।