যদিও রয়েছি বেঁচে

যদিও রয়েছি বেঁচে ১৯৩৮-এ আজও মোরা-
তবু আমাদের জন্ম যেন হয়েছিল কোনও এক ধূসর শতকে- মধ্যযুগে-
দেহের আরাম দিতে গিয়ে মোরা বিদ্বানের জন্ম দিতে পারি নাই
অনুভব করিয়াছি- পৃথিবীতে ঢের নদী আছে
(আজ মনে হয় পীত স্ফীত মুখ বগলার কুলোর বাতাস)
অনুভব করিয়াছি একদিন- কোথাও মুকুর আছে-
সেইখানে মুখ দেখে নিলে
অস্তগিরির পড়ন্ত সূর্যকে- ব্যথা নয়- অমোঘ ইশারা ব’লে মনে হবে
যে সীমাহীন কৌম নীলিমার।

তারপর মনে হ’ল স্ফীত। স্ফীতস্তন দানবীর স্যাডিজম
যেইখানে মুকুরের বিভা ছিল?
সেইখানে অবোধ ফাটলে বিচূর্ণ হয়ে
গ্রাম গ্রামান্তের মূঢ় সূতিকাঘরের সদ্যঃপাতি শিশুদের মতো
লক্ষ লক্ষ কাচের কণিকা
শতাব্দীর ছবি ধ’রে আছে আজ।

আমরা মুকুর তবু গড়িব না আর
মুকুরের আভা ছিল?-
আমাদের বিশ্বাসের স্বাদ বহুদিন বেঁচে থেকে হয়ে গেছে কৃমিঘন
এই পৃথিবীতে ঢের নদী ছিল একদিন (বিশাখা, শতদ্রু, রাভী, রেবা, তাপ্তি)
সেইখানে শুষ্ক খাদে- বালুর ভিতরে ক্যাম্পে ব’সে থেকে সারাদিন
আমরা দেখিতে আছি বুনোহাঁস সূর্যবিম্বের দিকে উড়ে যেতে-যেতে
হয়ে গেল স্ফটিকের মতো আলো- লাল মরু, নীল জল
তবুও মৈথুন, ভয়, অসময়- শাবকের তরে গুণাগার রেখে মৃত্যু।

এইসব আধোবিস্মৃতির দেশ; মাথার উপরে নীল বায়ুর ভিতরে
তবু এরা পরম্পরা
আমাদের দ্রুত মৃত্যু দ্রুততম ব্যক্তির, শ্লথ মৃত্যু মন্থরের
ব্যক্তি শুধু, মানবিক কোনও সংঘটন নয়।
কারা আলো আর অন্ন রেখে গেছে
অন্ধকার গুমোটের রাত দেখে?
জল রেখে গেছে? ক্ষুৎপিপাসায় কামুকের মতো দেহ প্রশ্নপূর্ণ করে ফেলে
আকাশ এসেছে (শুধু) নেমে আমাদের কাঁধের উপরে- নির্বান্ধব শবের মতন
আমাদের ভারবাহী উট জেনে
আমাদের শেষযাত্রা এইবার আত্তিলার অধিকৃত পৃথিবীর দ্রাঘিমায়
উত্তোলিত গ্রীবা নিয়ে অভিভূত বায়ু-জন্তুদের মতো
যেন এক নিঃসংশয় যোজনায়।

আমাদের ট্যাঁক থেকে কয়েকটা মর্মরের ডিম বালুর উপরে খ’সে গেল
উটের বিষ্ঠার নীচে
মৃত বেদুইনদের নিষ্ঠাহীন চোয়ালের ফাঁপরে বিষম খেয়ে ডুবে গেল;
ডুবে যাক।
তবু, আমাদের তরে এই সব বুদ্ধমূর্তি আজও লোল, লীলাময়-
আজও কৃকলাস ডিম-
আমরা মুকুর, তবু, গড়িতে পারি না আর।