যখন গিয়েছে ডেকে নিসর্গ

যখন গিয়েছে ডেকে নিসর্গ আমারে
দ্বিতীয় বারের মতো আর এক বার
তিক্ততায় ভ’রে ছিল আমার হৃদয়
তবুও হৃদয়ে ছিল অবৈধ অশ্লীল অহঙ্কার
অদ্ভুত গভীর জল ভালোবেসে ফেলে
বৈতরণী থেকে যাহা নিঃসরিত হয়
চিত্রসেনী আর তার প্রিয় সেই জলে
লোষ্ট্র উপঢৌকনের মতো পেল লয়।

তার পর ঢের ম্যাজি দেখা দিল আমার এ-জানালায়
অধীত পুস্তক থেকে মুখ তুলে দেখিলাম- অপূর্ব আক্রোশে
আমার গৃহের প্রতি পরমাণুবিম্বের দিকে
চেয়ে আছে- বিশৃঙ্খল সময়ের দোষে
যে-সব মসৃণ সত্য হয়েছে কর্কশ
আবার নিটোল নীল ক’রে দেবে ব’লে
অনেক মৃত্যুর পথ, মরুপথ, নোনা পথ ঘুরে
উটের ককুদে চ’ড়ে এখানে এসেছে তারা চ’লে।

আমার গৃহের সব ধূম্র পুস্তকেরা
হাজার বছর আগে গিয়েছে পাথর হয়ে যেই কৃকলাস
আলোকবর্ষের পথে যেই সব জ্যোতিষ্কেরা আচমন ক’রে গেছে
তাহাদের সাথে যেন এক দিন সহগর্ভাবাস
হয়েছিল এই সব ম্যাজি’দের-
আমার প্রাণের সাথে সঙ্ঘর্ষ গভীর রাতে আজ
আধেক নিমীল চোখে বহু দিন- পূর্ণ গর্ভিণীর মতো আমি
ভেবেছি আমারই ডিম: এই সৃষ্টি,- এই ভূত,- মানবসমাজ

তার পর আধো-নিমীলিত চোখ পুনর্বার
যখন সৃষ্টিকে করে নিজের নিয়মে নিয়ন্ত্রণ
পায়ের নিম্নে এক লোষ্ট্রকে মনে হয়- গরুড়ের মতো
মৃত এক পতঙ্গকে মনে হয় ইন্দ্রপতন
গভীর তিক্ততা এক সময়ের সন্নিধানে বেঁচে থেকে
হৃদয় কোথাও কোনও অভিজ্ঞান চায়
পৃথিবীর অরণ্যের অঙ্গারেরা যে-রকম
হীরার খনির দিকে হাঁটিতেছে স্থির- আরও স্থির ধীমত্তায়

আমরা নক্ষত্র, সূর্য, অনুসূর্য করেছি রচনা-
ম্যাজি’রা উঠিল ব’লে, নরকের গাম্ভীর্যে গভীর
‘মৃত্যু কী;- জানে না কোনও মরুঞ্চে পাখিরা
কবিদের উইয়ে-কাটা উপমার ভিড়
কবিদের;- তবু যদি মনীষীর লাল কালি স্থৈর্য পেত
তোমার খড়্গে নেমে, হে রুদ্র বরাহ-অবতার
নটীরা জানিত যদি কোথায় নৃত্যের জন্ম
নৃত্য কেন চির-দিন চিরবৃত্তাকার।’