জনতাহীন দেশে

তার পর তার সাথে দেখা হ’ল এক দিন আবার জনতাহীন দেশে
সৈকতে দাঁড়ায়ে থেকে যেমন মানুষ ঢের দূরে
সংগ্রাম-মুখর ম্লান সমুদ্রকে সত্তা হয়ে উঠে যেতে দেখে
ব্রহ্মার দেয়ালের স্তব্ধতায়- তেমন সে রয়েছে দাঁড়ায়ে, স্থির
অতীতকে পিছে ফেলে- জীবনের সেই সব স্ফীত
পরিভাষা ভুলে গিয়ে- বিকেলের পড়ন্ত রোদের রঙে
বড়ো এক মাঠের কিনারে- তবু- দাঁড়ায়ে রয়েছে কুয়াশায়
মনে হয় চারি-দিকে যেন সব নগরী- মজুর- চিল- নদী
স্প্রিঙের আবেগে চ’লে ছবির মতন তবু সব- ভূমির ভিতরে
কেন্দ্রহীন। কোনও এক দার্শনিক এইখানে এসে
সমন্বয় পেয়ে যাবে ক্রমে তবু- আগুলফলম্বিত তার
স্থিরতম ইশারাকে দেখে- আমিও মধ্যম বিন্দু পেয়ে গেছি
নরনারী, মৃত্যু, জল- আমার এ-জীবনের পরিধির।

তির্যক স্তম্ভের মতো দূর থেকে দাঁড়ায়ে রয়েছে কলকাতা
পাখির পালক নিয়ে যেন এক ঘুমন্তের গায়ে
আঁচড় কাটিতে পারে তার ঐ নিরুৎসুক অবলেপ
আমাদের নিকটে সমুদ্র নাই আজ
বৃহৎ নগরী তার ছিপছিপে জানালার লোভে
বুকের নিকটে চায় রাত্রির অকৃত্রিম গ্লানিমাকে
আমার মনের ভাবনা সব ধীরে জেগে উঠে
কোনও এক বিষয়ীর হাতে যেন লবণদানায়-গড়া মূর্তির মতন
দাঁড়ায়ে রয়েছে স্থির ঘড়ির সময় ভ’রে এই পূর্ণ বায়ুহীন দেশে
কমলা-রঙের শান্ত নিরুত্তেজ রোদের ভিতর।
এই ঘুম মৃত্যু নয়। আমাদের সচেতন জীবনের সাষ্টাঙ্গ স্পষ্টতা
এই মেঘ চায় যেমন বিকেলে সূর্য অবিকল শতাব্দীর ঢের
বেবিলন ভেঙে ফেলে- কোনও কিছু গড়িবার প্রয়োজনে চেয়ে দেখে
জমি উপড়ায়ে ফেলে চ’লে গেছে চাষা- প্রবীণ পরিধি
প’ড়ে আছে; শিশিরের শব্দের মতন বুধ, শুক্র, মঙ্গল।