জন্তুর হৃদয়ে ঢের ভয়

জন্তুর হৃদয়ে ঢের ভয় জেগে থাকে।
মৃত্যু-স্বাদ, সে-রকম ভয় মহার্ঘ জিনিস
জন্তুরা চেনে না এই ভয়ের সাথে বিজড়িত
জীবন-ও-মৃত্যুর প্রজ্জ্বলিত বিষ।

আপনার রুধিরের সংস্কারে সারসের ভিড়
প্রথম শীতের সূচে গলা তুলে অবহিত হয়ে
চ’লে যায় খানিকটা উষ্ণতর সমুদ্রের দিকে
পনিরের মতো ম্লান ডানার বিনয়ে

সেই দূর সমুদ্রের তীরে তবে কারা আছে:
পারাপার-প্রত্যাখ্যাত কঙ্কালের রাশি?
অথবা সূর্যের বৃত্ত সোনার ডিবের মতো দূরে?
অথবা চ্যবন, ব্রহ্মা, হিরণ্যকশিপু, পুলকেশী?

পাখিদের মস্তিষ্কের নিরুত্তর কৌটার ভিতরে
রয়েছে পাথর ঢের; নিক্ষিপ্ত প্রস্তর থেকে ভয়।
তবু মৃত্যু কী জিনিস জানে না ক’ তারা
মানুষের প্রাণে সেই পাথর তবুও অর্থময়

হিম গোমেদের মতো। মানুষ রচনা ক’রে গেছে মৃত্যুকে
সুমেরীয় সম্রাটের সমাহিত গেলাসের মতো
তবুও মৃত্যুর পর জীবন চেয়েছি পুনর্বার
কারুশিল্পী যদিও গেলাস- গেলাস গড়েছে প্রথমত

বায়ুর ভিতর থেকে সমস্ত অদ্ভুত বিদূষক
কাঁচি দিয়ে কেটে দেবে সম্রাটের কান
গেলাস রয়েছে তার অন্তঃসত্ত্বা পূর্ণিমার মতো:
জরায়ুর ডিম্বে নাই এক ফোঁটা জলের সন্তান?

আমরা রচনা ক’রে গেছি মৃত্যুকে
তার পর চার্বাকের ধূম্র দাঁত ভেঙে
আমরা মৃত্যুর পর ধূসর ভূতের মতো, আহা
জ্যোৎস্নার রৌদ্রে উঠি নারীদের তির্যক দর্পণে রেঙে

যখন সাহস ক’রে তাহাদের কেউ-কেউ- কিংবা অবিনয়ে- মহামোহানার মুখে এসে
শুনেছে সিংহী’র প্রতি মুমূর্ষু মৃতের মুখে ভয়াবহ শ্লেষ
দেখে গেছে চিতাবাঘিনি’র ছালে আকাশের শোকাবহ নক্ষত্রেরা মৃত
অফুরন্ত রৌদ্রের অববাহিকায় তবু সকলের দুই চোখে সপ্রতিভ দীপ্তির নির্দেশ

পৃথিবীর যাহা কিছু বিকিরণ বিচ্ছুরণের মতো তাহাদের কথা ভেবে-ভেবে
তার পর এক দিন গাঢ় স্বর্ণ-এনামেলে আলো হল আমার টেবিল
পৃথিবীর দীপ্ত, তবু আলোকের চেয়ে দ্রুত, ছোটে যদি এই ভয়ে প্রেমে
তার চারি-দিক ঘিরে অভিভূত রয়েছে নিখিল।