খেতের ধান কাটা হয়ে গেছে

খেতের ধান কাটা হয়ে গেছে প্রায়
কতকগুলো এবড়োখেবড়ো ধান
আর সোনালি গন্ধটুকু লেগে রয়েছে
দুপুর তার জ্বলন্ত পাখা উড়িয়ে চলেছে
অদৃশ্য আগুন সুতাশাঁখ সাপের শরীরের মতো
সমস্ত খেতের মাথায় ঝিন্-ঝিন্ করছে-

একটা বক তার লম্বা ঠ্যাঙের ঠেঙোয়
খেতের ভিতরে আস্তে-আস্তে হেঁটে বেড়াচ্ছে
ধানের ঢেউয়ে হারিয়ে যাচ্ছে এক বার
এক বার আলোর মুখে
একাকী এক জন যক্ষের মতো এই প্রখর দুপুরে
ধানের শেষ সোনা ছাড়ছে না তাকে আর

(পউষের) নিশপিশ দুপুর- একাকীতম- কঠিন
লঘু ফড়িঙের হলদে দেহের আঘাতে
মোরগফুলের পাপড়ি ঝ’রে পড়ছে
সকালের সুন্দর রক্তিম মচকাফুল শুকনো হয়ে এল
জবার পাপড়ি মাড়-দেওয়া কাপড়ের ভাঁজের মতো কুঁচকে যাচ্ছে
স্থলপদ্মের ভোরের ফিকে রং চড়েছে- মুখে তার মৃত্যুর রক্ত দানা বাঁধছে

চওড়া স্নিগ্ধ নীল ডুমুর-পাতার আড়ালে
মাছরাঙার একটা চকোলেট পালক (দেখা যাচ্ছে)
তার শরীরের সবুজ নীল হলুদ আভা চোখে দেখা যায় না
মেয়েলি হাতের মতো এক-রাশ পাতা এসে সে-সব লুকিয়ে রেখেছে
দেয়ালি-পোকা- দ্রোণফুলের সাদা মাংসের ভিতর ঢুকে পড়েছে
রাত্রির বিছানায় নরম স্তনের নিবিড়তা পেয়েছে সে যেন

চারি-দিকের ফুটন্ত জল মাঝপুকুরের একটা বাঁশের খুঁটিকে দগ্ধ করছে
চেয়ে দেখ সেই খুঁটির মুখের দিকে: কী নিঃসহায়
চিংড়িমাছের নরম শাঁস ছটফট ক’রে ওঠে
পুকুরের কিনারে শ্যাওলার শীতলতায় চ’লে যায় সে
ধীরে-ধীরে দাঁড়া নাড়ছে তার সেইখানে
শান্তি পেল- গভীর শান্তি

কখন সন্ধ্যা আসবে- আহা, সেই নারী
তার খেজুররসের মতো মাদক শিশির-শরীর দিয়ে
সূর্যকেও শান্ত ক’রে রাখবে
ঘাসের ভিতর থেকে রৌদ্রের গন্ধ মুছে দেবে
নরম কুয়াশার স্তন ন’ড়ে উঠবে আকাশে
সমস্ত আকাশ হবে জোনাকির কামনার বিছানা।