কবিকে দেখে এলাম

কবিকে দেখে এলাম
দেখে এলাম কবিকে
আনন্দের কবিতা একাদিক্রমে লিখে চলেছে
তবুও পয়সা রোজগার করবার দরকার আছে তার
কেউ উইল ক’রে কিছু রেখে যায় নি
চাকরি নেই
ব্যবসার মারপ্যাঁচ বোঝে না সে
‘শেয়ার মার্কেটে নামলে কেমন হয়?’ জিজ্ঞেস করলে আমাকে
হায়, আমাকে!
‘লাইফ ইনসিওরেন্সের এজেন্সি নিলে হয় না?’ শুধায়
‘লটারির টিকিট কিনলে কেমন হয়? ডার্বি নয়- আইরিশ সুইপ নয়- গোয়ার- কিংবা বউবাজারের?’- এই ব’লে
শীতের সকালে চামসে চাদরখানা ভালো ক’রে জড়িয়ে নেয় গায়
খড়ি-খড়ি মুখে এক বার হাত বুলায়
মাজনহীন হলদে দাঁত কেলিয়ে এক বার হাসে
মাইনাস-এইট লেন্সের ভিতর আধমরা চুনোমাছের মতো দু’টো চোখ: বেঁচে আছে! না ম’রে?
কোনও দিন যৌবনের স্বাদ পেয়েছিল? পায় নি?
মরুঞ্চে দু’টো চুনোমাছ চোখের বদলে কাজ করছে যেন
মরণোম্মুখ ট্যাংরা
পৃথিবীর থেকে আনন্দ সংগ্রহ করছে
সবাইকে ভরসার কথা শোনাচ্ছে
ভালোবাসার জয়গান করছে
হলদে দাঁতের ভিতর থেকে পিত্তের দুর্গন্ধ
বিড়ি হচ্ছে খোরাক
লাইফ ইনসিওরেন্সের এজেন্ট কিছুতেই সে হ’তে পারবে না
এক হাজার আরব-রজনী ঘুরেও এক হাজার টাকার কেস সে দিতে পারবে না ওরিয়েন্টালকে কিংবা হিন্দুস্থানকে
জীবনে এইটুকু চমৎকার টনক রয়েছে তার
কম নয়।

আনন্দবাজারে একটা কাজ জুটিয়ে দাও তাকে;
কিন্তু তাতেও সুবিধা হবে কি?
তাকে কেউ কিছু উইল ক’রে গেলে পারত
তা হ’লে-
চশমার পাথর মুছে নিয়ে
শীতের প্রকোপ থেকে নিজেকে বাঁচাবার জন্য চামসে চাদর গায়ে জড়িয়ে
নির্বিবাদে কবিতা লিখে যেতে পারত সে
আনন্দের কবিতা।

হয়তো প্রফিল্যাকটিক টুথব্রাশও একটা কিনতে পারত
আর ফরহ্যানস টুথপেস্ট
দাঁত ও মাড়ি সুন্দর- শক্ত হত তার
হ্যালিটোসিস থাকত না
চোখের পিঁচুটি থাকত না
থাকত না ডিসপেপসিয়া
পেটের গ্যাস
স্ট্রেপটোকোকাস
তেলচিটে ঘেমো ভাপসা চাদরটা প্রাণ পেত
কিন্তু থাক:- কবিতার সঙ্গে এ-সবের কী সম্পর্ক
বিশেষত আনন্দের কবিতার সঙ্গে-

কবিকে দেখে আমরা কী করব?
পড়ব তার আনন্দের কবিতা- কবিতার বই
আর্ট-পেপারে- আর্ট প্রেসে ছাপা হয়
অনির্বচনীয় কভার
কখনও-বা আন্ধকারিক, নাক্ষত্রিক- কখনও-বা প্রান্তরের বটের গুঁড়ির ফাঁকে
জ্যোৎস্নার মতো- জ্যোৎস্নার প্রেতাত্মার মতো;
ডিমাই সাইজ; একটার-পর-একটা বেরোয়
পুজোর মরশুমে
ফি পুজোর মরশুমে
কিংবা বড়োদিনের গুলজারের সময়
হাতে ক’রে গভীর সান্ত্বনা পাই-
অবাক হয়ে ভাবি: কবি কিছু পয়সা পেল?
পেল না হয়তো
কিন্তু উপন্যাস লিখে পায়-

যাক্- এসো, আমরা তার কবিতা পড়ি
অজস্র আশাপ্রদ কবিতা
টইটুম্বুর জীবনের স্লট-মেশিনে তৈরি
এক-একটা গোল্ড ফ্লেক সিগারেটের মতো।

উত্তরসূরি। কার্তিক-পৌষ ১৩৬২