কখনও মুহূর্ত

কখনও মুহূর্ত আসে সূর্য আর শিশিরের জলে
ব’সে থাকবার মতো-
অথবা কখনও দেখি দিন নিভে গেছে
হরিয়াল প্রন্তরের পারে চ’লে গেছে
ডানার ঝিলিকে তার সব-চেয়ে শেষ রোদ্দুর
জ্বালিয়ে সে সূর্যকে নিভিয়ে এ-বার নিভে গেল।

পৃথিবীতে এইবার নদীর নিজের ঠিক মুহূর্ত এসেছে;
টেরচা বাঁক ভাঙা পাড় দিয়ে হেঁটে-হেঁটে
মনে হয়, মানুষের হাতে-গড়া সাঁকো
কোনও প্রতীকের মতো বস্তু নয়,
দিকদর্শনের মতো নিজেই রয়েছে নদী
অন্ধকার জল থেকে ধূসর জলের দিকে চ’লে যায়, গেছে;
আজকের কালকের আগামী কালের
নিরিখ ও নাবিককে বুকে ক’রে নিয়ে চ’লে গেছে;
জীবনকে নৌবিদ্যা শেখায়
ঝড়ে আর শান্ত জলে ঘূর্ণি জলে চোরাবালি পাঁকে
ঢের-বার তোমাকে আমাকে গ্রাস ক’রে
আবার ফিরিয়ে দেয় পৃথিবীর পটে- পটান্তরে- হৃদয়ে- বিষয়ে
দ্রুত ধাবমান সাদা-কালো রঙের অক্লান্ত ভূমিকায়
যেতে চায় কোনও এক সাগরের দিকে
মানুষের বিবরণ প্রাচীন হয়েছে ঢের
আমাদের সকলের বয়স বেড়েছে খুব
নদী এসে বার-বার যযাতিকে যৌবন দেয়
ঘনজলধন্যা নদী- স্থবিরতা নেই;
পাড় ভেঙে ফেলে পাড়া প্রান্তরের দিকে চলে
যেন সে আকাশ নীল- আকাশে ঝড়- দুই দিকে তীর আছে- নেই
যেইখানে রাষ্ট্র নেই- সেই নৈরাজ্যের দিকে যায়
যেখানে মানুষ নেই- অপমানুষের ভিড় মরা-আধমরা
হাড় আছে রক্ত আছে বালি ফণীমনসার কাঁটা
নিয়ন টিউব গ্যাস বিদ্যুৎবাতির বিহ্বলতা
এই সব আলোড়ন ভাঙা শূন্য কান্তি আর নীড়
ভেদ ক’রে বিষ গিলে অমৃতকুম্ভের মতো কোলাহলে
ঢের মৃত নাবিককে নিমগ্ন নিশ্চিহ্ন ক’রে ফেলে
নব-নব নাবিকের জন্ম দিয়ে তারা আর সূর্যের আলোয়
মাছরাঙা-বর্ণিমায় অন্ধকারে রোদের ঝিলিকে
কেবলই ব্যক্তির মন ভেঙে নিয়ে নদী নব-নব জল গ’ড়ে নিল
ইতিহাসবেলা ভেঙে অসীম সাগর
সিন্ধু অতিক্রম ক’রে অপার আকাশ
মানুষকে অতিক্রম ক’রে ফেলে নবীন মানব
নব শীত নব রাত্রি বিপদের দিকচক্রবাল
লক্ষ্য ক’রে অবিরল জলকল্লোলের রক্ত, জল,
আর মরুভূমির মানব চলেছে অবিরল।

কার্তিক ১৩৮৬