কোনও দিকে মেঘ নাই

কোনও দিকে মেঘ নাই-
একটি গভীর স্থির নীলিমার নিস্তব্ধতা- যত দূর চোখ যায়-
যত দূর কানের পটহহীন ধূমাময় সমুদ্রেরা যেতে পারে-
নির্জন নীলিমা ঐ তাহাদের বোধ করে না ক’
সে কারু দেবতা নয়- নয় কারু মানবী জননী- নয় কারু মানবী বনিতা
শান্ত, নীল পৃথিবীর নীল লেগুনের মতো নয় তবু কিছু
বিবর্ণ জলের পিরামিডে যদি ঢিল প’ড়ে কথা ব’লে ওঠে- করুণ, কুঞ্চিত- কর্কশ-
মনীষী তবুও কোনও নাই পৃথিবীতে নীলিমা যাহারে কাছে ডেকে নিয়ে
জানাবে নিজের কথা: জলের মতন, সমুদ্রের বিহঙ্গের মতো, মৃত্তিকার মতো:
কোনও প্রিয় অভিভাবিকার হৃদয়ের ভাষ্য খুলে-
প্রভাতের রৌদ্রে উড়ে ফড়িং কি তার দিকে চায়? কোনও কথা ভাবে?
রৌদ্র তারে সারা-দিন যখন চোখের কাছে করিছে গোচর
কীট পাখি পতঙ্গের ওড়াউড়ি, দূর ঊর্ধ্বে কোলাহল
আমাদের-ই কলরব যেন;- প্রতিহত হয়ে ফিরে আসে,
যেন মৃত্তিকার- রুটিনের;- যেন জনরব।
আফিসের মানব-ঘড়ির খানিকটা টিফিন- সমাপ্তি শুধু।
নীলিমার স্তব্ধতারে- গাম্ভীর্যেরে- সন্ত্রাসেরে
দস্তানার মতো ক’রে হৃদয়ে পরিতে গিয়ে
মসৃণ কবোষ্ণ এক অনুগতি বাজারের খানিকটা শীত হতে লক্ষ ক’রে
লঘু এক স্বাদ আনে; জিজ্ঞাসার অন্ধকারে সর্বহিত সুসঙ্গত শান্তির বুদবুদ পাওয়া যায়;
পুরোনো দিনের এক বেলুনের মতো তবু সব ফুঁড়ে যায় মুহূর্তেই
কোনও এক লুক্কায়িত ভাঁড় যেন ত্রিকোণ গাধা’র-টুপি প’রে
চেককাটা ইজেরের, পরিপ্লুত শেমিজের পরিহাসে
অকস্মাৎ আমাদের মুখে হাসি ছুঁড়ে মেরে নিজেরে প্রকাশ ক’রে
ঢের শূন্য মদের-পিপার ‘পরে ব’সে আছে- নিরুপায়- একা-
সার্কাসের মনিবের সাথে তার বহু দিন দেখা নাই
পৃথিবীর অনাদি বেকার;- কোনও দিন দেখা হবে না ক’-
হয়তো-বা নীল সমুদ্রের ধ্বনি শোনা যায় কোনও দিকে-
হয়তো-বা প্রভাতের প্রস্ফুরিত আলো রয়েছে কোথাও
এই দিকে বাজারের শব্দ শুধু ভেসে আসে
অর্ধমৃত কোনও নারী, বালিকার কাঁচি
বিচ্ছৃঙ্খল জীবনের মরুজয়ী সৈন্যদের কোটের পকেট কেটে
কাটায়েছে বহু দিন
তাই আজ অনুতাপে দগ্ধ হয়ে মরিতেছে
ইহুদি কুঠের মুখ: হায়নার মতো: শেষ কৃপা চাহিতেছে তাহাদের কাছে
গৃহস্থের পোষা হাঁস ঘরে ফিরে আসে সন্ধ্যায়
প্রভাতের বায়ু শুধু আপনারে চিনিতেছে বন্দরের বিচরণে;
কী জিনিস- জানে না ক’ তারা:
চিরন্তন সংঘর্ষের তরে চিরন্তনী তারা শুধু।

ভেসে আসে বছরের কলরব সারা-দিন
চিনে- নিগ্রো- কাফির- ফিরিঙ্গি- শিবস্থ বিশ্বের আমিষ মনুষ্যপ্রাণ থেকে
গরম বায়ুর কাছে ধরা দিয়ে
একরাশ কেরোসিন-বাক্সে ব’সে
বাজারের তরঙ্গের দৌত্যহীন শব্দ শুনে-
দুপুরের সূর্যটারে রগড়ে চিবায়ে ফেলে বার-বার মনাক্কা’র মতো
বোলতা-মাছির শবে সংজ্ঞাহীন জলের চাটনি চেটে সারা-দিন
এক দিন গজমুক্তা- এক দিন গজমুক্তা পাবে ব’লে
অদৃশ্য হাতির শুঁড়ের সাথে খেলা করে;
কঙ্কাল-অমৃত তারা চেখে খায়।
কাদামাখা রক্তাক্ত কাপড়, লুঙ্গি, পাতলুন নিয়ে
দেয়ালে টাঙানো এক সমুদ্রের ছবির ভিতরে
এক দল হাঙরের হাঁ-এর ভিতর সব শেষ হলে ডুবে গেল তারা

কোনও দিকে মেঘ নাই-
একটি গভীর স্থির নীলিমার নিস্তব্ধতা- যত দূর চোখ যায়-
যত দূর কানের পটহহীন ধূমাময় সমুদ্রেরা যেতে পারে-
বধির নীলিমা ঐ তাহাদের রোধ করে না ক’
সে কারু দেবতা নয়- নয় কারু দানবী জননী- নয় কারু মানবী বনিতা।