কুয়াশার মতো এক গোরু

সাদা এক গাভী এসে দেখা দিত জ্যোৎস্নায়
নিস্তরঙ্গ উঁচু এক প্রাসাদের কাছে
যেখানে জামির-গাছ- দীর্ঘ এক
দারুভূত রূপ হয়ে আছে

কোনও কিছু মৃত্তিকার
কোনও এক অপার্থিব কিছু
বিবর্ণ প্রাসাদ তার ধূসর পেঁচার চোখে
হামাগুড়ি দিয়ে চুপে-নিচু

তাহাদের দু’-জনার স্তব্ধতার মাঝে এসে ধরা দিত
রক্তের নিঃশ্বাস সব পিছে রেখে এসে
এক হাত কুয়াশার মতো স’রে
চাঁদের শিঙের দিকে রোমহীন মসৃণ নগ্ন কোল ঘেঁষে

মৃত্তিকার মুখ থেকে মানুষের মতন পৃথিবী
ম’রে গেছে বহু দিন- মানুষের মৃত্যু হয় রাতের গভীর জ্যোৎস্নায়
(রাতের গভীর জ্যোৎস্না মানবিক মৃত্যু শুধু)
তাহাদের কল্পনার কেরোসিন আলো গেছে নিভি

ধবল গাভীর শুধু এ-পৃথিবী
কড়ির মতন সাদা দৃঢ় জ্যোৎস্নার
সুদীর্ঘ জামির-তরু জানে সব
এ-পৃথিবী কোনও কথা জানে না ক’ আর

অনেক পাতার- নীল- চিক্কণ
যৌবনের রেখা উচ্ছ্বসিত এক তরু
তাহার ছালের গন্ধে- হ্রদের মতন কালো চোখ ঘষে
কুয়াশার মতো এক গোরু

কোন এক দূরত্ব তারে ছেড়ে দিত
প্রান্তরের সব ঘাস মিলে
পারিত না শান্তি দিতে তারে আর
প্রান্তরের গম্বুজে জ্যোৎস্না উঠিলে

মৃত অলিন্দের সম্রাটের মতো সব
জামিরের শীর্ণ দীর্ঘ প্রশাখা নিচয়
শান্তি আর পেত না ক’ প্রাসাদের থামে ঝুঁকে
যত ক্ষণ ছায়া তার আরও গাভীময়

বিস্মিত সঞ্চারে এক না উঠিত ভ’রে
বড় সাদা গোপনীয় চাঁদের মতন
হৃদয়ে- হ্রদের জলে- ঢের নিচে
নিবিড় রহিত দুই জন

যেন কোনও চিতাবাঘ নাই এই পৃথিবীতে
চিন্তার মক্ষিকারা নাই
যেন কোনও শিশু নাই গাভীটির মৌন কোষে
গোরা-কামুক এসে পা জড়ায়ে করে না খোদাই

ধবল নির্জন স্তন- কোনও স্তব্ধ হেমন্তের রাতে
জামির-তরুর মেঘে কোনও দিন ফোটে না ক’ রক্তের ফল
ভাঙা আরশির ভীত প্রতিবিম্ব শান্তি পায় এইখানে
এই প্রেম পৃথিবীতে কোনও দিন হয় না সফল

তাই এক অরণ্যের অন্ধকার থেকে
এক দিন এল এক ঝড়
প্রাসাদের রুক্ষ থাম আঘাত করিল এসে
জামিরের রক্তের ভিতর

বধির দু’ চোখ তার হয়ে গেল
চুল তার হয়ে গেল পেয়ারা-পাতার মতো সাদা
অনেক গভীর- পাকা- পীত ফলে পৃথিবীর
সমস্ত শরীর তার হয়ে গেল কাদা

মানুষের দেহ সব যখন ঘুমায়ে থাকে পৃথিবীতে
পুকুরে সিঙারা-ফলে যখন জোনাকি
কীট খোঁজে- দুই জোড়া খুর শুধু দেখা যায় জ্যোৎস্নায়
সমস্ত ধবল দেহ হয়ে গেছে ফাঁকি

কোথায় গিয়েছে তার আভার শরীর
কোনও শিশু জন্মেছে কি জরায়ুতে তার
দেহ তার খেয়ে গেছে চিতাবাঘে?
তবুও মোমের মতো ছিল না ক’ ক্ষয়ে গলিবার

মোমে নয়;- গম্বুজে যখন জ্যোৎস্না জেগে ওঠে
বিবর্ণ থামের ঘ্রাণে ঝুঁকে থাকে জামিরের মতো এক তরু
যখন প্যাগোডা তারে ম্লান মুখে কাছে ডাকে ব’লে
চ’লে আসে কুয়াশার মতো এক গোরু।