চিঠি-৩

সর্বানন্দ ভবন
বরিশাল
১০. ১০. ৪২

প্রিয়বরেষু,

আপনার চিঠি বৃহস্পতিবার এখানে এসেছে। আমি তখন বাড়ি ছিলাম না, শুক্রবার বিকেলে পেয়েছি। আপনি রবিবারের মধ্যেই আমার কয়েকটি কবিতার ইংরেজি অনুবাদ চেয়েছেন। আমি সব সময় তাড়াতাড়ি কবিতা লিখতে পারি না; লিখলেও ভেবেচিন্তে দাঁড় করাতে হয়। কবিতার অনুবাদের বেলায়ও তাই।

তাড়াহুড়ো করে তিন-চারটে কবিতার তর্জমা পাঠাচ্ছি; শনিবারের শেষ ডাকের আগে পাঠানো অসম্ভব; আপনি হয়তো সোমবার পাবেন। কিন্তু অত তাড়াতাড়ি কি ঠিক জিনিস হয়? উপযুক্ত সময় ছাড়া আমি অন্তত মনের মতন জিনিস গড়তে নিতান্তই অক্ষম। Harold Acton এরকম short noticeএর ব্যবস্থা করলেন কেন? তার anthologyতে অসতর্কভাবে উপস্থিত থেকে কি খুশি হওয়া যাবে?

‘বনলতা সেন’, ‘বিড়াল’ ও ‘মনোবীজ’ কয়েক বছর আগে শারদীয়া আনন্দবাজারে বেরিয়েছিল। অনুবাদ করে পাঠালাম। ইংরেজি লেখার অভ্যাস নেই। হয়তো নানারকম রুটি রয়ে গেছে; আপনি একটু দেখে দিলে ভালো হবে। ‘হাওয়ার রাত’ ও কয়েকটি সাম্প্রতিক লিরিক আপনি যদি অনুবাদ করে দেন তা হলে খুব ভালো হয়; চর্চা ও প্রতিভা আছে আপনার-আমার চেয়ে ঢের ভালো তর্জমা হবে।

আরো কিছুদিন সময় দিলে আমি নিজেও অন্য কয়েকটি কবিতা অনুবাদ করে দিতে পারি।

‘হাওয়ার রাত’, ‘বিড়াল’, ‘বনলতা সেন’ ইত্যাদি কবিতাগুলো আমার কাব্যজীবনের এক বিলুপ্ত পর্যায়ের। এর পরবর্তী অধ্যায়গুলোর থেকে কয়েকটি কবিতা না দিলে anthologyতে আমার কবিতা কোনোক্রমেই representative হবে না।

‘বনলতা সেন’এর বিজ্ঞাপন তো দিয়েছেন। কিন্তু ঐ নামই কি থাকবে? আশা করি ভালো আছেন।

লক্ষ্মীপূজোর পর কলকাতায় যাব ভাবছি। প্রীতি নিন।

জীবনানন্দ দাশ


[দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়কে লেখা।]