লোকেন বোসের জর্নাল

সুজাতাকে ভালোবাসতাম আমি-
এখনও কি ভালোবাসি?
সেটা অবসরে ভাববার কথা,
অবসর তবু নেই;
তবু এক দিন হেমন্ত এলে অবকাশ পাওয়া যাবে;
এখন শেলফে চার্বাক ফ্রয়েড প্লেটো পাভলভ ভাবে
সুজাতাকে আমি ভালোবাসি কি না।

পুরোনো চিঠির ফাইল কিছু আছে:
সুজাতা লিখেছে আমার কাছে,
বারো তেরো কুড়ি বছর আগের সে-সব কথা;
ফাইল নাড়া কী-যে মিহি কেরানীর কাজ;
নাড়বো না আমি,
নেড়ে কার কী-সে লাভ;
মনে হয় যেন অমিতা সেনের সাথে সুবলের ভাব,
সুবলেরই শুধু? অবশ্য আমি তাকে,
মানে, এই- এই অমিতা বলছি যাকে-
কিন্তু কথাটা থাক;
কিন্তু তবুও-
আজকে হৃদয় পথিক নয় তো আর,
নারী যদি মৃগতৃষ্ণার মতো- তবে
এখন কী ক’রে মন কারাভান হবে।

প্রৌঢ় হৃদয়, তুমি
সেই সব মৃগতৃষ্ণিকাতলে ঈষৎ সিমুমে
হয়তো কখনও বৈতাল মরুভূমি,
হৃদয়, হৃদয় তুমি!
তার পর তুমি নিজের ভিতরে ফিরে এসে তবু চুপে
মরীচিকা জয় করেছ বিনয়ী যে-ভীষণ নাম-রূপে-
সেখানে বালির সৎ নীরবতা ধু- ধু
প্রেম নয় তবু প্রেমেরই মতন শুধু।

অমিতা সেনকে সুবল কি ভালোবাসে?
অমিতা নিজে কি তাকে?
অবসর-মতো কথা ভাবা যাবে,
ঢের অবসর চাই;
দূর ব্রহ্মাণ্ডকে তিলে টেনে এনে সমাহিত হওয়া চাই;
এখুনি টেনিসে যেতে হবে তবু,
ফিরে এসে রাতে ক্লাবে;
কখন সময় হবে।

হেমন্তে ঘাসে নীল ফুল ফোটে-
হৃদয় কেন-যে কাঁপে,
‘ভালোবাসতাম’- স্মৃতি- অঙ্গার- পাপে
তর্কিত কেন রয়েছে বর্তমান।
সে-ও কি আমায়- সুজাতা আমায় ভালোবেসে ফেলেছিল?
আজও ভালোবাসে না কি?
ইলেকট্রনেরা নিজ দোষ-গুণে বলয়িত হয়ে রবে;
কোনও অন্তিম ক্ষালিত আকাশে এর উত্তর হবে?

সুজাতা এখন ভুবনেশ্বরে;
অমিতা কি মিহিজামে?
বহুদিন থেকে ঠিকানা না জেনে ভালোই হয়েছে- সবই।
ঘাসের ভিতরে নীল সাদা ফুল ফোটে হেমন্ত-রাগে;
সময়ের এই স্থির এক দিক,
তবু স্থিরতর নয়;
প্রতিটি দিনের নতুন জীবাণু আবার স্থাপিত হয়।