লক্ষ-লক্ষ নাগরিক রয়েছি

লক্ষ-লক্ষ নাগরিক রয়েছি আমরা এই শহরে- দিনের শেষে রাত্রির শেষে
আমাদের মাথার উপর নীল আকাশে কোনও প্রশস্ত সুন্দর অঙুলি-নির্দেশ রয়েছে কি?
জানি না; উঁচু-উঁচু বিবর্ণ দেয়ালে ধোঁয়ায় ধুলোয় আকাশকেও আমরা দেখতে পাই না
জীবনের অনেকটা সময়ই আকাশের নক্ষত্রের কথা মনে থাকে না;
আকাশকেও একটা অপরিচিত জীব ব’লে মনে হয়।

আমরা এখানে রয়েছি লক্ষ-লক্ষ কোটি-কোটি চলন্ত উন্মুখ মানুষ
কিন্তু কিসের জন্য উন্মুখ?

কেউ একটি পয়সার জন্য, আহা, কেউ খানিকটা তামাশার জন্য
কেউ ঘুমোবার জন্য একটু জায়গা চায় শুধু: পার্কে, ইঁদুরের খুপরির ভিতর, নর্দমার কাছে, ফুটপাথে
কিন্তু তবুও মৃত্যুর শান্ত বিস্তীর্ণ কোলে জায়গা খুঁজে নিতে ভয় হয় তাদের
ভয় হয়-
কেউ রূপ চায়, কেউ ছবি চায়, কেউ দেহ চায়, কেউ দেহ দান করে!
ঐ-যে বিদ্যুতের মতো গতিতে মোটর ছুটেছে- হয়তো বিস্মিত হয়ে ভাবছ কোনও নক্ষত্রের দিকে চলেছে-
নক্ষত্র ঢের দূরে; পয়সার বিনিময়ে এ-পৃথিবীতে যা-কিছু পাওয়া যায়, তারই জন্য ছুটেছে ঐ মোটর
কিংবা এই পৃথিবীর যা-কিছু বিনিময়ে যা-কিছু পয়সা পাওয়া যায়, তারই জন্য।

কেই-বা একটু ভালোবাসতে চায়…
কেউ-বা দেশলাইয়ে জ্বেলে জীবনের অনুভূতি নষ্ট ক’রে দিতে চায়- নইলে জীবন চালানো যায় না!
জীবন চালাবার গভীর সাধ
বড়ো হওয়ার সাধ, নাড়ির দ্রুত স্পন্দন এখানে সকলেরই প্রায়- এক জন মুটের পর্যন্ত
তাদের সম্ভ্রমের চোখে দেখো
কিন্তু তবুও এখানে অনেক ক্ষুদ্র জীব রয়ে গেছে- যেমন, আমি এক জন-
হাজার-হাজার মোটর এখানে দিন-রাত পৃথিবী জয় করছে- সে-ভাগ্য আমার জুটল না
আমাদের অনেকেরই জুটল না।

কিন্ত তবুও আমরাও চলন্ত- উন্মুখ-
ফুটপাথ থেকে ফুটপাথে- পথ থেকে পথে- পথ থেকে পথে- পথ থেকে পথে…

আকাশে ছেঁড়া-ছেঁড়া মেঘ- ঠাণ্ডা বাতাস- গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি
রাত গভীর- গভীরতর হয়- গির্জার ঘড়িতে দেড়টা
মোটরের দেশ এখন ঘুমিয়ে গেছে- ফুটপাথে ভিখিরি ঘুমিয়ে-
কোনও ধোঁয়া নেই- ধুলো নেই- কোলাহল নেই
উঁচু-উঁচু প্রাচীরগুলোও তাদের মাথা গুটিয়ে নিয়েছে (ঘুমোবার জন্য হয়তো)
অনেকখানি নীল আকাশকে দেখতে পাওয়া যায় তাই- অনেক নক্ষত্রকে
মনে হয় শিশির-ঝরার শব্দ শুনতে পাচ্ছি- বনচালতা’র নীল শরীর জেগে উঠেছে
খেজুর-গাছের মাথায় সোঁদা রসে নীল পাখনা ভিজিয়ে মৌমাছি উড়ছে
হিম কুয়াশার ভিতর করমচা’র ডালে পাটকিলে পাখার ছায়া
পৃথিবীর একাকীতম পাখির গভীর শান্তি আমার হৃদয়ে।