লর্ড এভারগ্রীন

পৃথিবীতে ঢের দিন ঘুরে আমি অবশেষে দেখি
জীবনের রাত-দিন হয়ে গেছি মেয়েটির মায়াবলে অবিবেকি।
অবিকল- এ-রকম মাঝে-মাঝে হয়ে যেত বটে
দুই দীর্ঘ কান নিয়ে রাসভের মতো অকপটে
ধবল রঙের এক ঘোটকীকে খুঁজে
সময় চালাত লর্বালা সে-সময়- আমি চোখ বুজে
অন্ধকারে আমার পৃথক পৃথিবী সৃষ্টি ক’রে
ঢেঁকির তর্কের মুখে ব্রহ্মা’কে ধ’রে
আমার কণ্ঠের থেকে সহসা করেছি অনুভব
ভাস্বর হ্রেষার মতো অবিকল রব।
তবু প্রভুভক্তেরা যে-রকম খুঁজে নেয় প্রভু
(কুকুর তবুও খোঁজে যে-রকম প্রভু)
লুপ্ত সব মনীষীর কাছে গিয়ে তার পর- তবু
তাদের গ্রন্থের লোকে ফিরে
আধো-মোম আধো-মৃত মানুষের মনের ফিকিরে
ঘুরেছি ব্যুৎপত্তি পেতে- তবু তারা সব
অসংখ্য উত্তরমালা- যদি আমি কোনও অভিনব
প্রশ্ন ক’রে তাহাদের ব্যথা দিই- মনে ক’রে সব
আমার মৃত্যুর আগে ম’রে গিয়ে হয়েছে নীরব।

সম্প্রতি বিবর্ণ ঘরে আমার হাতের থেকে ধীরে
করতালি বেজে ওঠে- আধো-চেনা অস্পষ্ট শরীরে
দু’-একটি ছায়ালোক দূর থেকে হেসে
দেয়ালে, খোঁড়লে, শেলফে- খন্দে- অন্ধকারে- বস্তু-নির্বিশেষে
মিশে যায়- এমন মিশেই ছিল- তাহাদের নেই আর পুনরুত্থান।
চেয়ে দেখি জানালার পুরু কাচে দু’টো প্রতিভাসমান দীর্ঘ কান
মোমের আলোয় কেউ ধূসর- ধূসরতর বইয়ের উপরে
মশার কামড় খেয়ে বিখ্যাত কানের সুখে নড়ে।
মৃতের জগৎ ছেড়ে- পুস্তকের পৃথিবী এড়িয়ে
নিজের স্বতন্ত্র পৃথিবী ছেড়ে দিয়ে
কায়ক্লেশ ভুলে গিয়ে হৃদয়ের ক্ষোভে
অন্য এক ভূমিকার অকৃত্রিম লোভে
নেমে এসে দেখলাম অগণ্য দেয়াল
একটি বৃত্তার্ধ ঘুরে সীমাহীন কাল
(ফুরায়ে আবার বাকি গোলার্ধকে ঘিরে)
শেষ ক’রে দিয়ে তবু অবশিষ্ট পরিধিকে ঘিরে
গোলাকার দীনারের মতো দীপ্ত হয়ে ওঠে ধীরে
স্বতই সম্মুখে তবু চ’লে যায় পথ
গোলকধাঁধার মতো বিজড়িত রেখার জগৎ
অনন্ত সরল লাইন মনে হতে পারে
দীনারের আধো-আলো, রিরংসার আধো-অন্ধকারে
আমি সেই পথ ধ’রে যাত্রা করি (আমরণ) তবে
কৃতী মানুষেরা লীলাসঙ্গিনীর মতো অনুভবে
অবহিত হয়ে গেলে- অন্ধকারে- বল পাই আমি
এই পথে তিন বার তিন মাইল গেলে পরে স্বতই গোস্বামী
হয়ে যায় গোরু নিজে- জন্তুর শরীরে
মনিব মানবাত্মা জেগে ওঠে ধীরে
মূর্খ আর রূপসিকে পিঠে নিয়ে ভয়াবহ চরিত্র-সংযমে
গাধা’র দুইটি কান দীর্ঘতর হতেছিল ক্রমে
হ্রস্ব হয়ে যেতে পারে তবুও আবার
তৈলাধার পাত্র ভেঙে যদি পাত্ৰাধার
তৈল নিয়ে একটি নতুন যুগ পুরোনো যুগকে এসে সাধে
লম্বিত কানের তবে লর্ড এভারগ্রীন হতে কোনখানে বাধে।